পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
১৯

উদ্দেশে যাত্রা করিয়াছেন। আমি কার্য্যবশত পিছাইয়া পড়িয়াছিলাম। এই চটিতে আজ সন্ধ্যাবেলা তাঁহার সহিত মিলিবার কথা।”

 “পথে যেরূপ কাদা, তাহাতে পদচিহ্ন থাকিবার কথা, তাহাই অনুসরণ করিয়া আমি তাঁহার অনুসন্ধানে চলিলাম। তোমার ঘােটক লইলাম। তুমি পদব্রজে এস!”

চতুর্থ পরিচ্ছেদ।

 বিজন পথের ধারে অশথ গাছের তলায় বাহকশূন্য ভূতলস্থিত এক শিবিকার মধ্যে বৃদ্ধ বসন্তরায় বসিয়া আছেন। কাছে আর কেহ নাই, কেবল একটি পাঠান শিবিকার বাহিরে। একটা জনকোলাহল দূরে মিলাইয়া গেল। রজনী স্তব্ধ হইয়া গেল। বসন্তরায় জিজ্ঞাসা করিলেন—

 “খাঁ সাহেব, তুমি যে গেলে না?”

 পাঠান কহিল “হুজুর, কি করিয়া যাইব? আপনি আমাদের ধন প্রাণ রক্ষার জন্য আপনার সকল অনুচরগুলিকেই পাঠাইলেন। আপনাকে এই পথের ধারে রাত্রে অরক্ষিত অবস্থায় ফেলিয়া যাইব, এত বড় অকৃতজ্ঞ আমাকে ঠাহরাইবেন না। আমাদের কবি বলেন, যে আমার অপকার করে সে আমার কাছে ঋণী, পরকালে সে ঋণ তাহাকে শােধ করিতে হইবে; যে আমার উপকার করে আমি তাহার কাছে ঋণী, কিন্তু কোন কালে তাহার সে ঋণ শোধ করিতে পারিব না।”

 বসন্তরায় মনে মনে করিলেন, বাহবা, নােকটা ত বড় ভাল। কিছুক্ষণ বিতর্ক করিয়া পাল্কী হইতে তাঁহার টাকবিশিষ্ট মাথাটি বাহির করিয়া কহিলেন, “খাঁ সাহেব, তুমি বড় ভাল লােক।”

 খাঁ সাহেব তৎক্ষণাৎ এক সেলাম করিলেন। এ বিষয়ে বসন্তরায়ের সহিত খাঁ সাহেবের কিছুমাত্র মতের অনৈক্য ছিল না। বসন্তরায়