পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৮
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

গিয়াছেরে ভাই! যে দিন বসন্তরায়ের মাথায় এক মাথা চুল ছিল, সে দিন কি আর এত রাস্তা হাঁটিয়া তোমাদের খোষামোদ করিতে আসিতাম? একগাছি চুল পাকিলে তোমাদের মত পাঁচটা রূপসী চুল তুলিবার জন্য উমেদার হইত ও মনের আগ্রহে দশটা কাঁচা চুল তুলিয়া ফেলিত!”

 বিভা গম্ভীর স্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “আচ্ছা দাদামহাশয়, তোমার যখন একমাথা চুল ছিল, তখন কি তোমাকে এখনকার চেয়ে ভাল দেখিতে ছিল?”

 মনে মনে বিভার সে বিষয়ে বিষম সন্দেহ ছিল। দাদা মহাশয়ের টাক্‌টি, তাঁহার গুম্ফসম্পর্কশূন্য অধরের প্রশস্ত হাসিটি, তাঁহার পাকা আম্রের ন্যায় ভাবটি, সে মনে মনে পরিবর্ত্তন করিতে চেষ্টা করিল, কোন মতেই ভাল ঠেকিল না। সে দেখিল, সে টাক্‌টি না দিলে তাহার দাদামহাশয়কে কিছুতে মানায় না। আর গোঁফ জুড়িয়া দিলে দাদা মহাশয়ের মুখখানি একেবারে খারাপ দেখিতে হইয়া যায়। এত খারাপ হইয়া যায় যে, সে তাহা কল্পনা করিলে হাসি রাখিতে পারে না। দাদামহাশয়ের অবার গোঁফ! দাদা মহাশয়ের আবার টাক্ নাই!

 বসন্তরায় কহিলেন, “সে বিষয়ে অনেক মতভেদ আছে। আমার নাতনীরা আমার টাক্ দেখিয়া মোহিত হয়, তাহারা আমার চুল দেখে নাই। আমার দিদিমারা অপার চুল দেখিয়া মোহিত হইতেন, তাঁহারা আমার টাক্ দেখেন নাই। যাহারা উভয়ই দেখিয়াছে, তাহারা এখনো একটা মত স্থির করিতে পারে নাই।”

 বিভা কহিল, “কিন্তু তা বলিয়া দাদা মহাশয় যতটা টাক্ পড়িয়াছে তাহার অধিক পড়িলে আর ভাল দেখাইবে না!”

 সুরমা কহিল, “দাদামহাশয় টাকের আলোচনা পরে হইবে। এখন বিভার একটা যাহা হয় উপায় করিয়া দাও!”