“মলিন মুখে ফুটুক্ হাসি, জুড়াক দু নয়ন।
মলিন বসন ছাড় সখি, পর আভরণ।”
বিভা সেতারের তারে হাত দিয়া সেতার বন্ধ করিয়া আবার কহিল, “বাবার কাছে আমার কথা বলিয়াছ?”
এমন সময়ে উদয়াদিত্যের কনিষ্ঠ অষ্টমবর্ষীয় সমরাদিত্য ঘরের মধ্যে উঁকি মারিয়া বলিয়া উঠিল, “অ্যাঁ, দিদি! দাদামহাশয়ের সহিত গল্প করিতেছ! আমি মাকে বলিয়া দিয়া আসিতেছি।”
“এস, এস, ভাই এস!” বলিয়া বসন্তরায় তাহাকে পাক্ড়া করিলেন।
রাজ-পরিবারের বিশ্বাস এই যে, বসন্তরায় ও সুরমায় মিলিয়া উদয়াদিত্যের সর্ব্বনাশ করিয়াছে। এই নিমিত্ত বসন্তরায় আসিলে সামাল্ সামাল্ পড়িয়া যায়। সমরাদিত্য বসন্তরায়ের হাত ছাড়াইবার জন্য, টানা-হেঁচ্ড়া আরম্ভ করিল। বসন্তরায় তাহাকে সেতার দিয়া, তাহাকে কাঁধে চড়াইয়া, তাহাকে চস্মা পড়াইয়া, দুই দণ্ডের মধ্যে এমনি বশ করিয়া লইলেন যে, সে সমস্ত দিন দাদা মহাশয়ের পশ্চাৎ পশ্চাৎ ফিরিতে লাগিল ও অনবরত সেতার বাজাইয়া তাঁহার সেতারের পাঁচটা তার ছিড়িয়া দিল ও মেজরাপ কাড়িয়া লইয়া আর দিল না!
সপ্তম পরিচ্ছেদ।
চন্দ্রদ্বীপের রাজা রামচন্দ্র রায় তাঁহার রাজ-কক্ষে বসিয়া আছেন। ঘরটি অষ্টকোণ। কড়ি হইতে কাপড়ে মােড়া ঝাড় ঝুলিতেছে। দেয়ালের কুলঙ্গির মধ্যে একটাতে গণেশের ও বাকিগুলিতে শ্রীকৃষ্ণের নানা অবস্থার নানা প্রতিমূর্ত্তি স্থাপিত। সেগুলি বিখ্যাত কারিকর বটকৃষ্ণ কুম্ভকারের স্বহস্তে গঠিত। চারিদিকে চাদর পড়িয়াছে, মধ্যস্থলে জরিখচিত মছলন্দের গদি, তাহার উপর একটি রাজা ও একটা তাকিয়া।