তাহার চারি কোণে জরির ঝালর। দেয়ালের চারিদিকে দেশী আয়না ঝুলানাে, তাহাতে মুখ ঠিক দেখা যায় না। রাজার চারিদিকে যে সকল মনুষ্য-আয়না আছে, তাহাতেও তিনি মুখ ঠিক দেখিতে পান না, শরীরের পরিমান অত্যন্ত বড় দেখায়। রাজার বামপার্শ্বে এক প্রকাণ্ড আলবােলা ও মন্ত্রী হরিশঙ্কর। রাজার দক্ষিণে রমাই ভাঁড়, ও চস্মা-পরা সেনাপতি ফর্ণাণ্ডিজ্।
রাজা বলিলেন, “ওহে রমাই!”
রমাই বলিল, “আজ্ঞা, মহারাজ!”
রাজা হাসিয়া আকুল। মন্ত্রী রাজার অপেক্ষা অধিক হাসিলেন। ফর্ণাণ্ডিজ্ হাততালি দিয়া হাসিয়া উঠিল। সন্তোষে রমাইয়ের চোখ মিট্মিট্ করিতে লাগিল। রাজা ভাবেন রমাইয়ের কথায় না হাসিলে অরসিকতা প্রকাশ পায়; মন্ত্রী ভাবেন, রাজা হাসিলে হাসা কর্ত্তব্য; ফর্ণাণ্ডিজ্ ভাবে অবশ্য হাসিবার কিছু আছে। তাহা ছাড়া যে দুর্ভাগ্য, রমাই ঠোঁট খুলিলে দৈবাৎ না হাসে, রমাই তাহাকে কাঁদাইয়া ছাড়ে। নহিলে রমাইয়ের মান্ধাতার সমবয়স্ক ঠাট্টাগুলি শুনিয়া অল্প লােকেই আমােদে হাসে। তবে, ভয়ে ও কর্ত্তব্য-জ্ঞানে সকলেরই বিষম হাসি পায়, রাজা হইতে আরম্ভ করিয়া দ্বারী পর্য্যন্ত।
রাজা জিজ্ঞাসা করিলেন, “খবর কি হে?”
রমাই ভাবিল রসিকতা করা আবশ্যক।
“পরম্পরায় শুনা গেল, সেনাপতি মহাশয়ের ঘরে চোর পড়িয়াছিল।”
সেনাপতি মহাশয় অধীর হইয়া উঠিলেন। তিনি বুঝিলেন একটা পুরাতন গল্প তাঁহার উপর দিয়া চালাইবার চেষ্টা হইতেছে। তিনি রমাইয়ের রসিকতার ভয়ে যেমন কাতর, রমাই প্রতিবারে তেমনি তাঁহাকেই চাপিয়া ধরে। রাজার বড়ই আমােদ! রমাই আসিলেই ফর্ণাণ্ডিজ্কে ডাকিয়া পাঠান। রাজার জীবনে দুইটি প্রধান আমােদ