পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৫১

করিয়াছেন, তাঁহাকে ইচ্ছাপূর্ব্বক অপমান করা হইয়াছে। পূর্ব্বে দুই একবার তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিয়া লইয়া যাইবার জন্য রাজবাটি হইতে চকদিহিতে লােক প্রেরিত হইত, এবারে চকদিহি পার হইয়া দুই ক্রোশ আসিলে পর বামনহাটিতে দেওয়ানজি তাঁহাকে অভ্যর্থনা করিতে আসিয়াছেন। যদি বা দেওয়ানজি আসিলেন, তাঁহার সহিত দুই শত পঞ্চাশ জন বই লােক আসে নাই। কেন, সমস্ত যশােহরে কি আর পঞ্চাশ জন লােক মিলিল না? রাজাকে লইতে যে হাতীটি আসিয়াছে রমাই ভাঁড়ের মতে স্থূলকায় দেওয়ানজি তাহার অপেক্ষা বৃহত্তর। দেওয়ানকে রমাই জিজ্ঞাসা করিয়াছিল, “মহাশয় উটি বুঝি আপনার কনিষ্ঠ?” ভালমানুষ দেওয়ানজি ঈষৎ বিস্মিত হইয়া উত্তর দিয়াছিলেন, “না ওটা হাতী।”

 রাজা ক্ষুব্ধ হইয়া দেওয়ানকে কহিলেন “তােমাদের মন্ত্রী যে হাতীটাতে চড়িয়া থাকে, সেটাও যে ইহা অপেক্ষা বড়।”

 দেওয়ান কহিলেন, “বড় হাতীগুলি রাজকার্য্য উপলক্ষে দূরে পাঠানাে হইয়াছে, সহরে একটিও নাই।”

 রামচন্দ্র স্থির করিলেন, তাঁহাকে অপমান করিবার জন্যই তাহাদের দূরে পাঠানাে হইয়াছে। নহিলে আর কি কারণ থাকিতে পারে!

 রাজাধিরাজ রামচন্দ্র রায় আরক্তিম হইয়া শ্বশুরের নাম ধরিয়া বলিয়া উঠিলেন, “প্রতাপাদিত্য রায়ের চেয়ে আমি কিসে ছােট?”

 রমাই ভাঁড় কহিল, “বয়সে আর সম্পর্কে, নহিলে আর কিসে? তাহার মেয়েকে যে আপনি বিবাহ করিয়াছেন, ইহাতেই—”

 কাছে রামমােহন মাল দাঁড়াইয়াছিল, তাহার আর সহ্য হইল না, বিষম ক্রুদ্ধ হইয়া বলিয়া উঠিল, “দেখ ঠাকুর, তােমার বড় বাড় বাড়িয়াছে। আমার মাঠাকরুণের কথা অমন করিয়া বলিও না। এই স্পষ্ট কথা বলিলাম।”