পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

সে কঠোর কণ্ঠে এমনি কাটা কাটা কথা কহিতে লাগিল ও ক্রমেই তাহার মুখ দিয়া এমনি সকল রুচির বিকার বাহির হইতে লাগিল যে পুর-রমণীদের মুখ এক প্রকার বন্ধ হইয়া আসিল। তাহার মুখের কাছে থাকদিদিও চুপ করিয়া গেলেন। বিমলাদিদি ঘর হইতে উঠিয়া চলিয়া গেলেন। কেবল ভূতাের মা তাহাকে খুব এক কথা শুনাইয়াছিল। যখন উল্লিখিত ভূতাের মার মুখ খুব চলিতেছিল, তখন সেই প্রৌঢ়া তাহাকে বলিয়াছিল, “মাগো মা, তােমার মুখ নয়ত, এক গাছা ঝাঁটা!” ভূতাের মা তৎক্ষণাৎ কহিল, “আর মাগি, তাের মুখটা আঁস্তাকুড়, এত ঝাঁটাইলাম তবুও সাফ হইল না!” বলিয়া গস্ গস্ করিয়া চলিয়া গেল। একে একে ঘর খালি হইল, রামচন্দ্র রায় বিরাম পাইলেন!

 তখন সেই প্রৌঢ়া গৃহ হইতে বাহির হইয়া মহিষীর কক্ষে উপস্থিত হইল। সেখানে মহিষী দাসদাসীদিগকে খাওয়াইতেছিলেন। রামমােহনও এক পার্শ্বে বসিয়া খাইতেছিল। সেই প্রৌঢ়া, মহিষীর কাছে আসিয়া তাঁহাকে নিরীক্ষণ করিয়া কহিল,—“এই যে নিকষা জননী!” শুনিবামাত্র রামমােহন চমকিয়া উঠিল, প্রৌঢ়ার মুখের দিকে চাহিল। তৎক্ষণাৎ আহার পরিত্যাগ করিয়া শার্দ্দুলের ন্যায় লম্ফ দিয়া তাহার দুই হস্ত বজ্রমুষ্টিতে ধরিয়া বজ্রস্বরে বলিয়া উঠিল, “আমি যে ঠাকুর তোমায় চিনি!” বলিয়া তাহার মস্তকের বস্ত্র উন্মোচন করিয়া ফেলিল। আর কেহ নহে, রমাই ঠাকুর! রামমােহন ক্রোধে কাঁপিতে লাগিল, গাত্র হইতে চাদর খুলিয়া ফেলিল; দুই হস্তে অবলীলাক্রমে রমাইকে আকাশে তুলিল, কহিল “আজ আমার হাতে তাের মরণ আছে!” বলিয়া তাহাকে দুই এক পাক আকাশে ঘুরাইল। মহিষী ছুটিয়া আসিয়া কহিলেন, “রামমােহন তুই করিস্ কি?” রমাই কাতর স্বরে কহিল, “দোহাই বাবা, ব্রহ্মহত্যা করিস্ না!” চারিদিক হইতে বিষম একটা গােলযােগ উঠিল। তখন রামমােহন রমাইকে ভূমিতে নামাইয়া কাঁপিতে