পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬২
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

কহিলেন, বিভা কাছে থাকিলে ভাল হইত, মামাকে ভাল বিশ্বাস হইতেছে না।

 বিভা উদয়াদিত্যের কাছে একেবারে কাঁদিয়া গিয়া পড়িল, তাহার মুখ দিয়া আর কথা বাহির হইল না। সুরমা তাহাকে উঠাইয়া বসাইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কি হইয়াছে বিভা?” বিভা সুরমাকে দুই হস্তে জড়াইয়া ধরিয়া একটি কথাও বলিতে পারিল না। উদয়াদিত্য সস্নেহে বিভার মাথায় হাত দিয়া কহিলেন, “কেন, বিভা, কি হইয়াছে?” বিভা তাহার ভ্রাতার দুই হাত ধরিয়া কহিল, “দাদা আমার সঙ্গে এস, সমস্ত শুনিবে।”

 তিন জনে মিলিয়া বিভার শয়নকক্ষের দ্বারে গিয়া উপস্থিত হইলেন। সেখানে অন্ধকারে রামচন্দ্র বসিয়া, ও রমাপতি দাঁড়াইয়া আছেন। উদয়াদিত্য তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করিলেন “মামা, হইয়াছে কি?” রমাপতি একে একে সমস্তটা কহিলেন। উদয়াদিত্য তাঁহার আয়ত নেত্র বিস্ফারিত করিয়া সুরমার দিকে চাহিয়া কহিলেন “আমি এখনি পিতার কাছে। যাই—তাঁহাকে কোন মতেই আমি এ কাজ করিতে দিব না! কোন মতেই না!”

 সুরমা কহিল, “তাহাতে কি কোন ফল হইবে? তাহার চেয়ে বরং একবার দাদা মহাশয়কে তাঁহার কাছে পাঠাও, যদি কিছু উপকার দেখে।”

 যুবরাজ কহিলেন, “আচ্ছা।”

 বসন্তরায় তখন অগাধ নিদ্রা দিতেছিলেন। ঘুম ভাঙিয়াই উদয়াদিত্যকে দেখিয়া ভাবিলেন, বুঝি ভাের হইয়াছে। তৎক্ষণাৎ ললিতে একটা গান গাহিবার উপক্রম করিলেন,—

“কবরীতে ফুল শুকাল, কাননের ফুল ফুট্‌ল বনে,
দিনের আলো প্রকাশিল, মনের সাধ রহিল মনে!”