পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৬৩

 উদয়াদিত্য বলিলেন—“দাদা মহাশয়, বিপদ ঘটিয়াছে।”

 তৎক্ষণাৎ বসন্তরায়ের গান বন্ধ হইয়া গেল। ত্রস্ত ভাবে উঠিয়া উদয়াদিত্যের কাছে আসিয়া শশব্যস্তে জিজ্ঞাসা করিলেন—“অ্যাঁ! সে কি দাদা! কি হইয়াছে! কিসের বিপদ!”

 উদয়াদিত্য সমস্ত বলিলেন। বসন্তরায় শয্যায় বসিয়া পড়িলেন। উদয়াদিত্যের মুখের দিকে চাহিয়া ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন—“না, দাদা, না, এ কি কখনও হয়? এ কি কখনো সম্ভব?”

 উদয়াদিত্য কহিলেন, “আর সময় নাই, একবার পিতার কাছে যাও!”

 বসন্তরায় উঠিলেন, চলিলেন, যাইতে যাইতে কতবার জিজ্ঞাসা করিলেন, “দাদা, এ কি কখনো হয়, এ কি কখনো সম্ভব?”

 প্রতাপাদিত্যের গৃহে প্রবেশ করিয়াই জিজ্ঞাসা করিলেন, “বাবা প্রতাপ, একি কখন সম্ভব?” প্রতাপাদিত্য এখনও শয়নকক্ষে যান নাই —তিনি তাঁহার মন্ত্রগৃহে বসিয়া আছেন। একবার এক মুহূর্ত্তের জন্যে মনে হইয়াছিল লছমন সর্দ্দারকে ফিরিয়া ডাকিবেন! কিন্তু সে সঙ্কল্প তৎক্ষণাৎ মন হইতে দূর হইয়া গেল। প্রতাপাদিত্য কখনও দুইবার আদেশ করেন? যে মুখে আদেশ দেওয়া সেই মুখে আদেশ ফিরাইয়া লওয়া? আদেশ লইয়া ছেলেখেলা করা তাঁহার কার্য্য নহে। কিন্তু বিভা? বিভা বিধবা হইবে। রামচন্দ্র রায় যদি স্বেচ্ছপুর্ব্বক অগ্নিতে ঝাঁপ দিত, তাহা হইলেও ত বিভা বিধবা হইত—রামচন্দ্র রায় প্রতাপাদিত্য রায়ের রোষাগ্নিতে স্বেচ্ছাপূর্ব্বক ঝাঁপ দিয়াছে, তাহার অনিবার্য ফল স্বরূপ বিভা বিধবা হইবে! ইহাতে প্রতাপাদিত্যের কি হাত আছে! কিন্তু এত কথাও তাঁহার মনে হয় নাই। মাঝে মাঝে যখনি সমস্ত ঘটনাটা উজ্জ্বলরূপে তাঁহার মনে জাগিয়া উঠিতেছে, তখনি তিনি একেবারে অধীর হইয়া উঠিতেছেন, ভাবিতেছেন, রাত কখন পোহাইবে? ঠিক এমন সময়ে বৃদ্ধ বসন্তরায় ব্যস্তসমস্ত হইয়া গৃহে প্রবেশ