পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৬৭

মুছিয়া ফেলিল। স্বামীর হাত ধরিয়া তাহার শয়নকক্ষে লইয়া গেল। দৃঢ় পদে দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া অকম্পিত স্বরে কহিল—“দেখিব, এ ঘর হইতে তােমাকে কে বাহির করিয়া লইতে পারে! তুমি যেখানে যাইবে, আমি তােমার আগে আগে যাইব, দেখিব আমাকে কে বাধা দেয়!” উদয়াদিত্য দ্বারের নিকট দাঁড়াইয়া কহিলেন, “আমাকে বধ না করিয়া কেহ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিতে পারিবে না।” সুরমা কিছু না বলিয়া স্বামীর পার্শ্বে গিয়া দাঁড়াইল। বৃদ্ধ বসন্তরায় সকলের আগে আসিয়া দাঁড়াইলেন। মামা ধীরে ধীরে চলিয়া গেলেন। কিন্তু রামচন্দ্র রায়ের এ বন্দোবস্ত কিছুতেই ভাল লাগিল না। তিনি ভাবিতেছেন, “প্রতাপাদিত্য যে রকম লােক দেখিতেছি তিনি কি না করিতে পারেন। বিভা ও উদয়াদিত্য মাঝে পড়িয়া কিছু করিতে পারিবেন, এমন ত ভরসা হয় না। এ বাড়ি হইতে কোন মতে বাহির হইতে পারিলেই বাঁচি।”

 কিছুক্ষণ বাদে সুরমা উদয়াদিত্যকে মৃদুস্বরে কহিল, “আমাদের এখানে দাঁড়াইয়া থাকিলে যে কোন ফল হইবে তাহা ত বােধ হয় না; বরং উল্টা। পিতা যতই বাধা পাইবেন, ততই তাঁহার সংকল্প আরো দৃঢ় হইবে। আজ রাত্রেই কোন মতে প্রাসাদ হইতে পালাইবার উপায় কহিয়া দাও!”

 উদয়াদিত্য চিন্তিতভাবে কিয়ৎক্ষণ সুরমার মুখের দিকে চাহিয়া কহিলেন “তবে আমি যাই, বলপ্রয়ােগ করিয়া দেখিগে!”

 সুরমা দৃঢ় ভাবে সম্মতি-সূচক ঘাড় নাড়িয়া কহিল—“যাও।”

 উদয়াদিত্য তাঁহার উত্তরীয় বসন ফেলিয়া দিলেন—চলিলেন। সুরমা সঙ্গে সঙ্গে কিছু দূর গেল। নিভৃত স্থানে গিয়া সে উদয়াদিত্যের বক্ষ আলিঙ্গন করিয়া ধরিল। উদয়াদিত্য শির নত করিয়া তাহাকে একটি দীর্ঘ চুম্বন করিলেন; ও মুহূর্ত্তের মধ্যে চলিয়া গেলেন। তখন সুরমা তাহার শয়নকক্ষে আসিয়া উপস্থিত হইল। তাহার দুই চোখ বহিয়া অশ্রু পড়িতে লাগিল। যােড় হস্তে কহিল—“মাগাে—যদি আমি পতিব্রতা সতী