পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৭৫

কাছে রাত্রের ঘটনা সমস্তই অবগত হইলেন। যখন শুনিলেন, রামচন্দ্র রায় পালাইয়া গেছেন, তখন তাঁহার বিশেষ ভাবনা উপস্থিত হইল। মন্ত্রী বাহিরে গিয়া দেখিলেন, খর্ব্বকায় রমাই ভাঁড় গুঁড়ি মারিয়া বসিয়া আছে। মন্ত্রীকে দেখিয়া রমাই ভাঁড় কহিল “এই যে মন্ত্রী জাম্বুবান!” বলিয়া দাঁত বাহির করিল। তাহার সেই দন্তপ্রধান হাস্যকে রামচন্দ্রের সভাসদেরা রসিকতা বলিত, বিভীষিকা বলিত না! মন্ত্রী তাহার সাদর সম্ভাষণ শুনিয়া কিছুই বলিলেন না, তাহার প্রতি দৃকপাতও করিলেন না। একজন ভৃত্যকে কহিলেন “ইহাকে লইয়া আয়!” মন্ত্রী ভাবিলেন, এই অপদার্থটাকে এই বেলা প্রতাপাদিত্যের ক্রোধের সামনে খাড়া করিয়া দিই। প্রতাপাদিত্যের বজ্র একজন না এক জনের উপরে পড়িবেই—তা’ এই কলাগাছটার উপরেই পড়ুক, বাকি বড় বড় গাছ রক্ষা পাক্!

 রমাইকে দেখিয়াই প্রতাপাদিত্য একেবারে জ্বলিয়া উঠিলেন— বিশেষতঃ সে যখন প্রতাপাদিত্যকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য দাঁত বাহির করিয়া, অঙ্গভঙ্গী করিয়া একটা হাস্য রসের কথা কহিবার উপক্রম করিল, তখন প্রতাপাদিত্যের আর সহ্য হইল না, তিনি অবিলম্বে আসন ত্যাগ করিয়া উঠিয়া, দুই হাত নাড়িয়া দারুণ ঘৃণায় বলিয়া উঠিলেন, “দূর কর, দূর কর উহাকে এখনি দূর করিয়া দাও! ওটাকে আমার সম্মুখে আনিতে কে কহিল?” প্রতাপাদিত্যের রাগের সহিত যদি ঘৃণার উদয় না হইত, তবে রমাই ভাঁড় এ যাত্রা পরিত্রাণ পাইত না! কেন না ঘৃণ্য ব্যক্তিকে প্রহার করিতে গেলেও স্পর্শ করিতে হয়। রমাইকে তৎক্ষণাৎ বাহির করিয়া দেওয়া হইল।

 মন্ত্রী কহিলেন, “মহারাজ, রাজজামাতা,”

 প্রতাপাদিত্য অধীর ভাবে মাথা নাড়িয়া কহিলেন, “রামচন্দ্র রায়—”

 মন্ত্রী কহিলেন, “হাঁ, তিনি কাল রাত্রে রাজপুরী পরিত্যাগ করিয়া গিয়াছেন।”