পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট
৮১

বলিতেছ বলিয়াই তাহাকে বিশেষরূপে শাস্তি দিব! তুমি মাঝে পড়িয়া মীমাংসা করিতে আসিয়াছ কেন?”

 বসন্তরায় অত করিয়া উদয়াদিত্যের পক্ষ লইয়াছেন বলিয়াই প্রতাপাদিত্যের মন উদয়াদিত্যের বিশেষ বিপক্ষ হইয়া দাঁড়াইল। বসন্তরায় দেখিলেন, তাঁহাকে শাস্তি দিবার জন্যই পাছে উদয়াদিত্যকে শাস্তি দেওয়া হয়। চুপ করিয়া বসিয়া ভাবিতে লাগিলেন।

 কিয়ৎক্ষণ পরে শান্ত হইয়া প্রতাপাদিত্য কহিলেন, “যদি জানিতাম, উদয়াদিত্যের কিছুমাত্র নিজের মনের জোর আছে, তাহার একটা মত আছে, একটা অভিপ্রায় আছে, যাহা করে, সব নিজে হইতেই করে, যদি না জানিতাম যে, সে নির্ব্বোধটাকে যে খুসী ফুঁ দিয়া উড়াইয়া বেড়াইতে পারে, কটাক্ষের সঙ্কেতে ঘুরাইয়া মারিতে পারে, তাহা হইলে তাহার আজ আর রক্ষা ছিল না। আমি যেখানে ঐ পালকটাকে উড়িতে দেখিয়াছি, নীচের দিকে চাহিয়া দেখিয়াছি ফুঁ দিতেছে কে! এই জন্য উদয়াদিত্যকে শাস্তি দিতে ইচ্ছা করে না। সে শাস্তিরও অযােগ্য। কিন্তু শােন, পিতৃব্য ঠাকুর, তুমি যদি দ্বিতীয়বার যশােহরে আসিয়া উদয়াদিত্যের সহিত দেখা কর, তাহার প্রাণ বাঁচান দায় হইবে।”

 বসন্তরায় অনেকক্ষণ চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন; পরে ধীরে ধীরে উঠিয়া কহিলেন—“ভাল প্রতাপ, আজ সন্ধ্যা বেলায় তবে আমি চলিলাম।” আর, একটি কথা না বলিয়া বসন্তরায় ঘর হইতে বাহির হইয়া গেলেন, বাহির হইয়া গিয়া গভীর এক নিশ্বাস ফেলিলেন।

 প্রতাপাদিত্য স্থির করিয়াছেন, যে-কেহ উদয়াদিত্যকে ভালবাসে, উদয়াদিত্য যাহাদের বশীভূত, তাহাদিগকে উদয়াদিত্যের নিকট হইতে তফাৎ করিতে হইবে। মন্ত্রীকে কহিলেন, “বউমাকে আর রাজপুরীতে থাকিতে দেওয়া হইবে না, কোন সূত্রে তাহাকে তাহার বাপের বাড়ি