পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৮৪
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

রত্নের মত জমা করিয়া রাখিয়াছিলেন, তাহাই আজ একে একে সুরমার কাছে বাহির করিতে লাগিলেন।

 সুরমা কহিল, “আ—হা, দাদামহাশয়ের মত কি আর লােক আছে?”

 সুরমা ও উদয়াদিত্য বিভার ঘরে গেলেন।

 তখন বিভা তাহার দাদা মহাশয়ের পাকা চুল তুলিতেছে, ও তিনি বসিয়া গান গাইতেছেন;—

“ওরে, যেতে হবে, আর দেরী নাই,
পিছিয়ে প’ড়ে র’বি কত, সঙ্গীরা তাের গেল, সবাই।
আয়রে ভবের খেলা সেরে, আঁধার করে এসেছেরে,
(ওরে) পিছন ফিরে বারে বারে কাহার পানে চাহিস্‌রে ভাই।
খেল্‌তে এল ভবের নাটে, নতুন লোকে নতুন খেলা,
হেথা হতে আয়রে সরে, নইলে তােরে মার্‌বে ঢেলা,
নামিয়ে দেরে প্রাণের বােঝা, আরেক দেশে চল্‌রে সোজা,
(সেথা) নতুন করে বাঁধবি বাসা, নতুন খেলা খেল্‌বি সে ঠাঁই।

 উদয়াদিত্যকে দেখিয়া বসন্তরায় হাসিয়া কহিলেন, “দেখ ভাই, বিভা আমাকে ছাড়িতে চায় না। কি জানি আমাকে উহার কিসের আবশ্যক! এক কালে যে দুধ ছিল, বুড়া হইয়া সে ঘোল হইয়া উঠিয়াছে, তা, বিভা দুধের সাধ ঘােলে মিটাইতে চায় কেন? আমি যাব শুনিয়া বিভা কাঁদে! এমন আর কখন শুনিয়াছ? আমি ভাই, বিভার কান্না দেখিতে পারি না।” বলিয়া গাহিতে লাগিলেন,

“আমার যাবার সময় হল,
আমায় কেন রাখিস্ ধরে,
চোখের জলের বাঁধন দিয়ে
বাঁধিস্‌নে আর মায়া-ডােরে।