ভাবপ্রকাশের জন্য রূপ একান্ত আবশ্যকীয় । কিন্তু অসীম ভাব সীমাবদ্ধ রূপের দ্বারা প্রকাশ করা যায় না। সুতরাং রূপ নিয়তই চলবে ও পরিবর্তিত হবে, তা অবশ্যই মৃত্যুহীনকে প্রকাশের জন্য বিনষ্ট হবে । অভিব্যক্তি অবশ্যই স্পষ্ট অভিব্যক্তি হবে, আর তা কেবল এর রূপে ধরা দেয়। কিন্তু একই সঙ্গে অসীমের অভিব্যক্তি রূপে হবে তা সীমাহীন, আর তার রূপ কেবল তার গতিতে পড়বে ধরা । সেই কারণে জগৎ যখন আকৃতি গ্রহণ করে, তখন সে সদাই তার আকৃতিকে অতিক্রম করে যায়। এই জগৎ স্বচ্ছন্দে নিজেকে অতিক্রম করে যায়, আর এ কথাই প্রকাশ করে যে এর অর্থ, জগৎ যা ধারণ করতে পারে তার চেয়ে অনেক বেশি ।
নীতিবাদী বিষাদের সঙ্গে মাথা নাড়ে আর বলে এই জগৎ অহমিকা মাত্র। কিন্তু এই অহমিকা শূন্যতা নয়— এই শূন্যতায় সত্য নিহিত আছে। যদি জগৎ স্থির থাকে ও চূড়ান্ত হয়ে থাকে, তবে যে সত্য অসীম, তার স্বাধীনতা হারিয়ে মাতৃহারা শিশুর মতো নানা তথ্যভরা বন্দীশালারূপে এই জগৎ দেখা দেয়। তাই আধুনিক চিন্তাবিদ যে-কথা বলেন তা সত্য এই অর্থে যে গতিতেই সকল বস্তুর অর্থ নিহিত— কারণ কেবল বস্তুনিচয়ের মধ্যেই তাদের অর্থ নিহিত নেই, বরং তারা যেখানে তাদের সীমাকে অতিক্রম করে যায় সেখানেই অর্থ রয়েছে। ঈশোপনিষৎ এ কথাই ইঙ্গিত করেন যখন বলেন যে না ক্ষণস্থায়ী, না অনন্ত— স্বতন্ত্ররূপে কারোর কোনো অর্থ নেই। যখন তারা পরস্পরের মধ্যে সঙ্গতিপূর্ণ রূপে দেখা দেয়, কেবল তখনই সেই সঙ্গতির সাহায্যে আমরা ক্ষণস্থায়ীকে অতিক্রম করি ও অমরকে উপলব্ধি করি ।
যেহেতু এই জগৎ সীমাহীন ব্যক্তিত্বের জগৎ, সে কারণে আমাদের জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এই জগতের সঙ্গে
& X
পাতা:ব্যক্তিত্ব - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৯
পরিভ্রমণে ঝাঁপ দিন
অনুসন্ধানে ঝাঁপ দিন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
