পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০
ব্যঙ্গকৌতুক

 অতএব, উক্ত কীট্টক ভট্ট ও পুণ্ড্রবর্দ্ধন মিশ্রের রচিত মোহান্তক ও জ্ঞানাঞ্জন নামক গ্রন্থে যদি গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারি ও অক্সিজেন বাষ্পের কোনাে উল্লেখ না পাওয়া যায়, তবে তাহা হইতে কী প্রমাণ হয়, বলা শক্ত। শুদ্ধ এই পর্য্যন্ত বলা যায় যে, উক্ত পণ্ডিতদ্বয়ের সময়ে গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারি ও অক্সিজেন্ আবিষ্কৃত হয় নাই। কিন্তু সে সময়টা কী, তাহা আমি অনুমান করিলে মধুসূদন শাস্ত্রী মহাশয় প্রতিবাদ করিবেন, এবং তিনি অনুমান করিলে আমি প্রতিবাদ করিব, তাহাতে সন্দেহ নাই।

 অতএব, কীট্টক ও পুণ্ড্রবর্দ্ধনের নিকট এইখানে বিদায় লইতে হইল। তাঁহাদের সম্বন্ধে আলােচনা অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত হইল, এজন্য পাঠকদিগের নিকট ক্ষমা ভিক্ষা করি। কিন্তু তাঁহাদিগকে বিবেচনা করিয়া দেখিতে হইবে যে, প্রথমত নন্দ, উপনন্দ, আনন্দ, ব্যোমপাল, ক্ষেমপাল, অনঙ্গপাল প্রভৃতি আঠারাে জন নৃপতির কাল ও বংশাবলী নির্ণয়-সম্বন্ধে মধুসূদন শাস্ত্রীর মত খণ্ডন করিয়া সােমদেব, চৌলুকভট্ট, শঙ্কর, কৃপানন্দ, উপমন্য়ু প্রভৃতি পণ্ডিতের জীবিতকাল নির্দ্ধারণ করিতে হইবে; তাহার পর, তাঁহাদের রচিত বােধপ্রদীপ, আনন্দসরিৎ, মুগ্ধ-চৈতন্যলহরী প্রভৃতি পঞ্চান্নখানি গ্রন্থের জীর্ণাবশেষ আলােচনা করিয়া দেখাইব, উহাদের মধ্যে কোনো গ্রন্থেই গ্যাল্‌ভ্যানিক ব্যাটারি অথবা অক্সিজেনের নাম গন্ধ নাই। উক্ত গ্রন্থসমূহে ষড়চক্রভেদ, সর্পদংশন মন্ত্র, রক্ষাবীজ আছে এবং একজন পণ্ডিত এমনও মত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, স্বপ্নে নিজের লাঙ্গুল দর্শন করিলে ব্রাহ্মণকে ভূমিদান ও কুণ্ডপতনক নামক চাতুর্ম্মাস্য ব্রতপালন আবশ্যক। কিন্তু ব্যাটারি ও বাষ্প বিষয়ে কোনাে বর্ণনা বা বিধান পাওয়া গেল না। আমরা ক্রমশ ইহার বিস্তারিত সমালােচনা করিয়া, ইতিহাসহীনতা সম্বন্ধে ভারতের দুর্নাম দূর করিব;―প্রাচীন গ্রন্থ হইতেই স্পষ্ট প্রমাণ করিয়া দিব যে, পুরাকালে