পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৬
ব্যঙ্গকৌতুক

নব সভ্যতার নূতন বিদ্যালয়ে নূতন শিক্ষা লাভ করিয়া নূতন তানে নূতন গান ধরিয়াছ, নূতন রসে নূতন মজিয়া নূতন ভাবে নূতন ভাের হইয়াছ, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তুমি যে এ কথা কখনো কিছু শােন নাই এবং আজ সম্পূর্ণ ভুলিয়া গিয়াছ, তুমি যে একথা কখনো কিছু বোঝ নাই এবং আজ একেবারেই বোঝ না, তুমি কী করিয়া বুঝিবে কেন করি! তবু, জিজ্ঞাসা করিবে কেন করি? আমি যে ভাই তােমাদের মিল পড়ি নাই, তােমাদের স্পেন্সর পড়ি নাই, তােমাদের ডারুয়িন্ পড়ি নাই, আমি যে ভাই তােমাদের হক সলি এবং টিণ্ড্যাল্, রাস্কিন এবং কার্লাইল্ পড়ি নাই, এবং পড়িয়া বুঝিতে পারি নাই, আমি যে ভাই কেবলমাত্র ষড়দর্শন এবং অষ্টাঙ্গ বেদ, সংহিতা এবং পুরাণ, আগম এবং নিগম, উপক্রমণিকা এবং ঋজুপাঠ প্রথম ভাগ পড়িয়াছি―ঐ সকল গ্রন্থ এই পতিত ভারতে আমি ছাড়া আর যে কেহ পড়ে নাই এবং বুঝে নাই ভাই! তবু আবার জিজ্ঞাসা করিবে কেন করি! প্রাণের ভাই সকল! আমি যে পাগল, বাতুল, উন্মাদ, বায়ুগ্রস্ত, আমার মাথার ঠিক নাই, বুদ্ধির স্থিরতা নাই, চিত্ত উদভ্রান্ত!

 “ভাই বাঙ্গালি, এখন বুঝিলে কী, কেন করি, অবোধ অশ্রু কেন পড়ে, পােড়া চোখের জল কেন বারণ মানে না,কেন মিছে অরণ্যেরােদন,অস্থানে ক্রন্দন করিয়া মরি! নীরব হৃদয়ের জ্বালা ব্যক্ত হইল কী, এই ভস্মীভূত প্রাণের শিখা দেখিতে পাইলে কী, শুষ্ক অশ্রুধারা দুই কপােল বাহিয়া কি প্রবাহিত হইল? যে ধ্বনি কখনো শােন নাই তাহার প্রতিধ্বনি শুনিলে কী, যে আশা কখনাে হৃদয়ে স্থান দাও নাই, তাহার নৈরাশ্য তিলমাত্র অনুভব করিলে কী, যাহা বুঝাইতে গেলে বুঝানাে যায় না এবং যাহা বুঝিতে চেষ্টা করিলে বুঝা উত্তরােত্তর অসাধ্য হইয়া উঠে, তাহা কি আজ তােমাদের এই উনবিংশ শতাব্দীর সভ্যতারুদ্ধ বধির কর্ণকুহরে প্রবেশ করিল?”