পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সারবান সাহিত্য
২১

যদি অভিনেতার কণ্ঠস্বর ও অঙ্গভঙ্গীতে ভিন্নতা না থাকে, তবে দর্শকগণের চিত্তে কখনই অনুরূপ ভাব উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিবে না।―লেখক।

পঞ্চমাঙ্ক। দৃশ্য কৈলাস।

সিংহের উপর ত্রিপুরারি ও মহাদেবী আসীন।

(সিংহের অভাবে কাঠের চৌকি হইলে ক্ষতি নাই।―লেখক)

 মহাদেবী। প্রভু, দেবদেব, তুমি তাে ত্রিকালজ্ঞ, ভূতভবিষ্যৎ বর্ত্তমান তােমার নখদর্পণে; এইবার বলো দেখি ১৮৭৯ সালের এক আইনে কী বলে?

 ত্রিপুরারি। মহাদেবি, শুম্ভনিশুম্ভঘাতিনি, তবে অবধান করো। কোনো একটি বিষয়ের অনেকগুলি দলিল হইলে তাহার মধ্যে প্রধান খানিতে নিয়মিত ষ্টাম্প অপরগুলিতে এক টাকা অনুসারে দিতে হয়।

 ইহার পর দলিল রেজেষ্টরীর খরচা, তামাদির নিয়ম, উকিল খরচ, খাজনা বিষয়ক আইন, ইন্‌কম্‌ট্যাক্স, বাঙ্গিডাক, মণিঅর্ডার; সর্ব্বশেষ সাউথ ইষ্টারণ ষ্টেট্ রেলওয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ভাড়ার কথা বিবৃত করিয়া যবনিকা পতন। এই অঙ্কে যে ব্যক্তি সিংহ সাজিবে তাহার কিঞ্চিৎ আপত্তি থাকিতে পারে,―অতােক্ষণ দুই জনকে স্কন্ধে করিয়া হামাগুড়ির ভঙ্গিতে নিশ্চল দাঁড়াইয়া থাকা কঠিন ব্যাপার। সেই জন্য উকিলখরচা কথনের মধ্যে সিংহ একবার গর্জ্জন করিয়া উঠিবে, “মা, আমার ক্ষুধা পাইয়াছে।” মা বলিবেন “তা যাও বাছা, সাহারা মরুতে তােমার শিকার ধরিয়া খাওগে, আমরা নীচে নামিয়া বসিতেছি।” হামাগুড়ি দিয়া সিংহ নিষ্ক্রান্ত হইবে। এই সুযােগে দর্শকেরা সিংহের আবাসস্থলের পরিচয় পাইবেন।―আমার কোনাে কোনাে নব্যবন্ধু পরামর্শ দিয়াছিলেন ইহার মধ্যে মধ্যে নন্দী ভৃঙ্গীর হাস্যরসের অবতারণা করিলে ভালাে হয়। কিন্তু তাহা হইলে নাটকের গৌরব লাঘব হয়।