পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মীমাংসা
২৩

 বুঝিতে পারি চণ্ডীদাস কেন লিখিয়াছেন,

“যে না দেশে বাঁশির ঘর সেই দেশে যাব,
ডালে মূলে উপাড়িয়া সাগরে ভাসাব।”

 কিন্তু পাঠক, আমার এ হৃদয়বেদনা তুমি কি বুবিয়াছ?―

উত্তর।

 আমি বুঝিয়াছি। যদিও আমি কুলবধূ নই। কারণ, আমি পুরুষ মানুষ। কিন্তু আমার বাড়ির পাশেও একটি কন্সর্টের দল আছে। তাহার মধ্যে একটি ছোক্‌রা নূতন বাঁশি অভ্যাস করিতে আরম্ভ করিয়াছে—প্রত্যুষ হইতে অর্দ্ধরাত্রি পর্যন্ত সারিগম্ সাধিতেছে। পূর্ব্বাপেক্ষা অনেকটা সড়গড় হইয়াছে; এখন প্রত্যেক সুর কেবলমাত্র আধসুর শিকিসুর তফাৎ দিয়া যাইতেছে। কিন্তু আমার চিত্ত উদাসীন হইয়া উঠিয়াছে―ঘরে আর কিছুতে মন টেঁকে না। বুঝিতে পারিতেছি রাধিকা কেন বলিয়াছিলেন “বারণ করলো, সই, আর যেন শ্যামের বাঁশি বাজে না বাজে না।” শ্যাম বোধ করি তখন নূতন সারিগম্ সাধিতে ছিলেন। বুঝিতে পারিতেছি চণ্ডীদাস কেন লিখিয়াছিলেন—

“যে না দেশে বাঁশির ঘর সেই দেশে যাব,
ডালে মূলে উপাড়িয়া সাগরে ভাসাব।”

 বোধ হয় চণ্ডীদাসের বাসার পাশে কন্সর্টের দল ছিল।

 আমার বাড়ির পাশে যে ছোকরা বাঁশি অভ্যাস করে, বোধ হয় তাহারি নাম মুকুন্দ ঘোষ।

শ্রীসঙ্গীতপ্রিয়।

 আমার এ কী হইল! এ কী বেদনা! নিদ্রা নাই, আহার নাই, মনে সুখ নাই। থাকিয়া থাকিয়া “চমকি চমকি উঠি”।

 কমলপত্র বীজন করিলে অসহ্য বোধ হয়, চন্দনপঙ্ক লেপন করিলে উপশম না হইয়া বিপরীত হয়।