পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পয়সার লাঞ্ছনা

 আমাদের আপিসের সাহেব বলে, বাঙালীর বেশি প্রয়ােজন নাই। সে স্থির করিয়া রাখিয়াছে ভদ্র বাঙালীর ছেলের পক্ষে মাসিক পঁচিশ টাকা খুব উচ্চ বেতন। আমাদের অবস্থা এবং আমাদের দেশের সম্বন্ধে সাহেবরা যখন একটা মত স্থির করে তখন তাহার উপর আমাদের কোনাে কথা বলা প্রগল্‌ভতা। কেবল সাহেবের প্রতি একটা অন্তত ঘনিষ্ট কুটুম্বিতাসূচক বিশেষণ প্রয়োগপূর্ব্বক মনের ক্ষোভে আপনা-আপনির মধ্যে বলাবলি করি—সাহেব সবই তো জানেন।

 শােনা যায় জগতের হরণ-পূরণের একটা নিয়ম আছে। সে নিয়মের অর্থ এই—যাহার একটার অভাব তাহার আর একটার বাহুল্য প্রায়ই থাকে। আপিসেও তাহার প্রমাণ পাওয়া যায়। আমাদের যেমন বেতন অল্প, তেমনি খাটুনি এবং লাঞ্ছনা অধিক এবং সাহেবের ঠিক তাহার বিপরীত।

 কিন্তু জগতের এ নিয়ম কোনো কোনো জগদ্বাসীর পক্ষে যেমনই আনন্দ জনক হৌক আমাদের পক্ষে ঠিক তেমন সুবিধার হয় নাই। কেবল অগত্যা সহিরা ছিলাম, কিন্তু যেদিন আমাদের উপরের স্তরে একটা কর্ম্ম খালি হইল এবং বাহির হইতে একটা কাঁচা ইংরাজের ছেলেকে সেই কর্ম্মে নিযুক্ত করিয়া আমাদের প্রমােশন্ বন্ধ করা হইল, সেদিল আমাদের ক্ষোভের আর সীমা রহিল না। ইচ্ছা হইল তখনি কাজ ফেলিয়া দিয়া চলিয়া যাই, একটা মিউটিনী করি, ইংরাজকে দেশ হইতে দুর করিয়া দিই, পার্লামেণ্টে একটা দরখাস্ত করি, ষ্টেট্‌স্‌ম্যান্ কাগজে একটা বেনানী পত্র লিখি। কিন্তু তাহার কোনােটা না করিয়া বাড়িতে চলিয়া গিয়া সেদিন আর জলখাবার খাইলাম না, খোকার সর্দ্দি হইয়াছে