পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
ব্যঙ্গকৌতুক

বলিয়া স্ত্রীকে যৎপরােনাস্তি লাঞ্ছনা করিলাম, স্ত্রী কাঁদিতে লাগিল, আমি সকাল সকাল শুইয়া পড়িলাম। শুইয়া শুইয়া ভাবিতে লাগিলাম, হায়রে পয়সা তাের জন্য এতে অপমান!

 স্ত্রী অভিমান করিয়া আমার কাছে আসিলেন না, কিন্তু নিঃশব্দ চরণে নিদ্রাদেবী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। হঠাৎ কখন্ দেখিতে পাইলাম—আমি একটি পয়সা। কিছু আশ্চর্য্য বােধ হইল না। কবে কোন্ সনাতন টাঁকশাল হইতে বাহির হইয়াছি যেন মনেও নাই। এই পর্য্যন্ত অবগত আছি যে, ব্রহ্মার পা হইতে যেমন শূদ্রের উৎপত্তি সেইরূপ টাঁকশালের অত্যন্ত নিম্নবিভাগেই আমাদের জন্ম।

 সেদিন শিকি দু-আনীর একটা মহতী সভা বসিবে কাগজে এইরূপ একটা বিজ্ঞাপন পড়া গিয়াছিল। হাতে কাজ ছিল না, কৌতূহলবশত গড়াইয়া গড়াইয়া সেই সভায় গিয়া উপস্থিত হইলাম, এবং দেয়ালের কাছে একটা কোণে আশ্রয় লইলাম।

 সুকুমারী সহধর্ম্মিণী দু-আনীকে সযত্নে বামপার্শ্বে লইয়া শুভ্রকায় চারআনীগুলি দলে দলে আসিয়া সভাগৃহ আচ্ছন্ন করিয়া ফেলিল। তাহারা বাস করে কেহ বা কোটের পকেটে, কেহ বা চামড়ার থলিতে, কেহ বা টিনের বাক্সে। কেহ কেহ বা অদৃষ্টগতিকে আমাদের প্রতিবেশীরূপে আমাদের পাড়ায় ট্যাঁকের মধ্যেও বদ্ধ হইয়া দিনযাপন করে।

 সেদিনকার আলােচনার বিষয়টা এই যে, “আমরা পয়সার সহিত সর্ব্বতােভাবে পৃথক হইতে চাহি, কারণ, উহারা বড়ােই হীন।” দু-আনীরা সুতীক্ষ্ণ উচ্চস্বরে কহিল “এবং উহারা তাম্রবর্ণ ও উহাদের গন্ধ ভালো নহে।” আমার পাশে একটি দু-আনী ছিল, সে ঈষৎ বাঁকিয়া বসিয়া নাসাগ্র কুঞ্চিত করিল, তাহার পার্শ্ববর্ত্তী চার-আনী আমার দিকে কট্‌মট্‌ করিয়া তাকাইল, আমি তো একেবারে সঙ্কোচে শিকি পয়সা হইয়া গেলাম। মনে মনে কহিলাম, আমাদেরই তো আটটা যােলটা হজম