পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পয়সার লাঞ্ছনা
২৭

করিয়া তােমাদের আজ এতো মূল্য, সে জন্য কি কিছু কৃতজ্ঞতা নাই? মাটির নীচে তাে উভয়ের সমান পদবী ছিল!

 সেদিন প্রস্তাব হইল গৌরমুদ্রা এবং তাম্রমুদ্রার জন্য স্বতন্ত্র টাঁকশাল স্থাপিত হৌক। যদিও এক মহারাণীর ছাপ উভয়ের উপর মারা হইয়াছে, তাই বলিয়া কোনােরূপ সাম্য আমরা স্বীকার করিতে চাহি না। আমরা এক ট্যাঁক, এক থলি, এক বাক্সে বাস করিব না, এমন কি শিকি দু-আনী ভাঙাইয়া পরসা করা ও পয়সা ভাঙাইয়া শিকি দু-আনী করা এরূপ অপমানজনক আইন ও আমরা পরিবর্ত্তন করিতে চাহি। সাম্যবাদের গৌরব আমরা অস্বীকার করি না, কিন্তু তাহার একটা সীমা আছে। গিনি মােহরের সহিত সিকি দু-আনি এক সাম্যসীমার অন্তর্গত, কিন্তু তাই বলিয়া শিকি দু-আনীর সহিত পয়সা।

 সকলেই চীৎকার করিয়া বলিয়া উঠিল, “কখনই নহে, কখনই নহে!” দু-আনীর তীব্র কণ্ঠস্বর সর্ব্বোচ্চে শােনা গেল। যে খনিতে আমার আদিম উৎপত্তি সেই খনির মধ্যে প্রবেশ করিবার ইচ্ছায় আমি বসুমতীকে দ্বিধা হইতে অনুরােধ করিলাম, বসুমতী সে অনুরােধ পালন করিল না—দেয়াল ঘেঁষিয়া রক্তবর্ণ হইয়া দাঁড়াইয়া রহিলাম।

 এমন সময়ে এক ঝক্‌ঝকে নূতন আট-আনী গড়াইয়া এক শিকি-দুআনীর সভার মধ্যে আসিয়া প্রবেশ করিল। সে দেখিলাম সকলকে ছাড়াইয়া উঠিল। সতেজে বক্তৃতা দিতে লাগিল, ঝন্‌ঝন্ শব্দে চারিদিকে করতালি পড়িল।

 কিন্তু আমি ঠাহর করিয়া শুনিলাম, বক্তৃতাটা যেমন হৌক আওয়াজটা ঠিক রূপালি ছাঁদের নহে। মনে বড়ো সন্দেহ হইল। সভা যখন ভঙ্গ হইল, ধীরে ধীরে গড়াইয়া গড়াইয়া বহুসাহসপূর্ব্বক তাহার গায়ের উপর গিয়া পড়িলাম―ঠন্ করিয়া আওয়াজ হইল, সে আওয়াজটা অত্যন্ত দিশি এবং গন্ধটাও দেখিলাম, আমাদের স্বজাতীয়ের মতাে। মহা রাগিয়া