পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৪
ব্যঙ্গকৌতুক

দিচ্চি বাকি পরে নিয়ো। তুমি তাে ভাই তােমার গালমন্দ আমাকে ষোল আনাই চুকিয়ে দিয়েচো, তা’তে বােধ করি তােমার মনটা কতকটা খােলসা হ’য়েচে, এখন আশীর্ব্বাদ ক’রে বাড়ি চ’লে যাও!

 ওহে বাপু, তােমার গহনা ফিরিয়ে দেওয়া সহজ নয়। যদি আমার স্ত্রী থাক্‌তেন আর তােমার গহনা তাঁকে দিতুম তা হ’লেও ফিরিয়ে আনা শক্ত হতো; আর যখন তিনি বর্ত্তমান নেই এবং তােমার গহনা তাঁকে দিইনি তখন ফিরিয়ে আনা আরো কতাে কঠিন তা একটুখানি ভেবে দেখ্‌লে তুমিও হয় তো বুঝ্‌তে পারবে। তবু যদি পীড়াপীড়ি করো তা হ’লে কাজেই তােমার হরিবাবুর ওখানে আমাকে যেতে হবে, কিন্তু খাবারটা আসে কি না আর একটু না দেখে যেতে পারচিনে!—উঃ! আর তো পারিনে! চন্দ্র, ওহে চন্দ্র! এখানে উদয়ের তো কোনাে সম্পর্ক নেই, এখন তুমি সুদ্ধ অস্ত গেলে আমি যে অন্ধকার দেখি! চন্দ্র! ওহে চন্দ্রকান্ত! এই যে এসেচো! চন্দ্র, তুমি তো তােমার বাবুকে চেনো, সত্য ক’রে বলাে দেখি আজ কাল এবং পরশুর মধ্যে তিনি কি হােটেল থেকে ফিরবেন?

 বােধ হয় ফিরবেন না? এতােক্ষণ পরে তােমার এই কথাটি আমার সম্পূর্ণ বিশ্বাস হ’চ্চে। যা হােক্ বড্ডো ক্ষিদে পেয়েচে এখন আর গাল দেবার সময় নেই, এই আধুলিটি নিয়ে যদি চট্ ক’রে কিছু খাবার কিনে আনো, তা হলে প্রাণ রক্ষে হয়।

 লােকটা নবাবী ক’রে বেড়ায় অথচ কাজকর্ম্ম কিছু নেই, আমরা ভাব্‌তুম চালায় কী ক’রে! এখন ব্যাপারটা বুঝ্‌তে পারচি! কিন্তু প্রত্যহ এতোগুলি গাল হজম ক’রে, এতােগুলি বিল্ ঠেকিয়ে, এতােগুলো লােক খেদিয়ে রাখা তো কম কাণ্ড নয়! এতে মজুরি পােষায় না, এর চেয়ে ঘানি ঠেলেও সুখ আছে!

 কী হে! শুধু মুড়ি নিয়ে এলে? আর কিচ্ছু পাওয়া গেল না? পয়সা কিছু ফিরেচে?