পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
ব্যঙ্গকৌতুক

আমি ব্রাহ্মণের ছেলে! (সমাগত প্রতিবেশিবর্গের প্রতি) তা, তােমরা তো সব শুনেচো দেখ্‌চি! সে স্বপ্নের কথা মনে হ’লে এখনো গা শিউরে উঠে। ভাই, উপ্‌রি উপ্‌রি তিন রাত্তির স্বপ্ন দেখ্‌লুম— মা গঙ্গা মকরের উপর চ’ড়ে আমার শিয়রের কাছে এসে বল্লেন, ওরে বেটা নন্দ, তাের কুবুদ্ধি ধ’রেছিলো তাই তুই রুদ্দুর বক্‌শির সঙ্গে পুষ্করিণী নিয়ে মামলা ক’র্‌তে গিয়েছিলি! রুদ্দুর বক্‌শি কে তা জানিস্? সত্য যুগে যে ছিল ভগীরথ সেই আজ বক্‌শির ঘরে আবির্ভাব ক’রেচে। হুগ্‌লি পুলের উপর দিয়ে যেদিন থেকে গাড়ি চ’লেচে সেই দিন থেকে আমিও তােদের ঐ পুষ্করিণীতে এসে অধিষ্ঠান ক’রেচি।—তখন আমার মনে হ’লো, ওরে বাপ রে! কী কাণ্ডই ক’রেচি। যিনি স্বয়ং কলিযুগের ভগীরথ তাঁরই সঙ্গে কি না গঙ্গার দখল নিয়ে আদালতে মকদ্দমা! এমন পাপও করে! এখন বুঝ্‌তে পারচি মকদ্দমায় কেন হার হ’লো এবং তােমরা পাড়ার সকলেই বা আদালতে হলফ্‌ নিয়ে কেন পরিষ্কার মিথ্যে সাক্ষী দিয়ে এলে! এ সমস্তই দেবতার কাণ্ড! তােমাদের মুখ দিয়ে অনর্গল মিথ্যে কথা একেবারে যেন গােমুখী থেকে গঙ্গাস্রোতের মতাে বেরােতে লাগ্‌লো—আমি নিতান্ত মূঢ়মতি পাপিষ্ঠ ব’লে প্রকৃত তত্ত্ব তখনো বুঝ্‌তে পারলুম না— মায়াতে অন্ধ হ’য়ে রইলুম এবং টাকাগুলাে কেবল উকিলে লুটে খেলে! (অশ্রুবিসর্জ্জন। এবং ভক্তিবিহ্বল নরনারীগণের হরিধ্বনি সহকারে কলিযুগের ভগীরথ দর্শনে গমন।)

দ্বিতীয় অঙ্ক

রুদ্রনারায়ণ বক্‌শি।

 (স্বগত) তাই বটে!—ছেলেবেলা থেকে বরাবর অকারণে কেমন আমার একটা ধারণা ছিল, যে, আমি বড়ো কম লােক নই। এতাে দিনে তা’র কারণটা বােঝা যাচ্চে। আর এ-ও দেখেচি ব্রাহ্মণের ঐ পুষ্করিণীটির