দুর্গন্ধ হয়ে উঠেচে―গাছগুলো ম’রে ম’রে উঠ্চে—যেদিন দক্ষিণের বাতাস দেয় সেদিন মনে হয় যেন নরককুণ্ডুর দক্ষিণের জান্লা দরজাগুলো সব কে খুলে দিয়েচে—সাতজন্মের পেটের ভাত উঠে আস্বার জো হয়। ছেলেগুলো যে কটা দিন ছিল কেবল ব্যামােয় ভুগেচে; কলিযুগের ভগীরথ হ’য়ে ডাক্তারের ফি দিতে দিতেই সর্ব্বস্বান্ত হ’তে হলাে—তা’রা সব যমদূত, ভক্তির ধার ধারে না, স্বয়ং মা গঙ্গাকে দেখতে এলে পূরােভিজিট আদায় ক’রে ছাড়ে। সে ও সহ্য হয়—কিন্তু খিড়কির ধারে ঐ যে দেশবিদেশের মড়া পুড়তে আরম্ভ হ’য়েচে ঐটেতে আমাকে কিছু কাবু ক’রেচে। অহর্নিশি চিতা জ্ব’ল্চে—কাছাকাছি যে সমস্ত বসতি ছিল সে সমস্তই উঠে গেচে—রাত্তিরে যখন হরিবােল হরিবােল শব্দ ওঠে এবং শেয়ালগুলো ডাক্তে থাকে তখন রক্ত শুকিয়ে যায়। স্ত্রী তাে বাপের বাড়ি চ’লে গেচেন। বাড়িতে চাকরদাসী টিঁক্তে পারে না। ভূতের ভয়ে দিনে দুপরে দাঁতকপাটি খেয়ে খেয়ে পড়ে। চারটি রেঁধে দেয় এমন লােক পাইনে। রাত্তিরে নিজের পায়ের শব্দ শুন্লে বুকের মধ্যে দুড়দুড় ক’র্তে থাকে—বাড়িতে জনমানব নেই—গঙ্গাযাত্রীর ঘর থেকে কেবল থেকে থেকে তারকব্রহ্ম নাম শুনি, আর গা ছম্ছম্ ক’র্তে থাকে! আবার হ’য়েছে কী—ছেড়েও যেতে পারি নে। আমার ভগীরথ নাম চতুর্দ্দিকেই রাষ্ট্র হ’য়ে গেচে—সকলেরই দর্শন ক’রতে ইচ্ছা হয়—সেদিন পশ্চিম থেকে দু-জন এসেছিলাে তাদের কথাই বুঝতে পারিনে। বেটারা ভক্তি ক’র্লে বটে কিন্তু আমার থালাবাটিগুলো চুরিও ক’রে গেচে! এখান থেকে উঠে গেলে হয় তো ঠিকানা না পেয়ে অনেকে ফিরে যেতে পারে। এদিকে আবার বিষয় কর্ম্ম দেখতে সময় পাচ্চিনে—আমার পত্তনী তালুকটার খাজানা বাকি প’ড়েচে; শুনেচি জমিদার অষ্টম ক’র্বে। শরীর ভয়ে অনিয়মে এবং ব্যামােয় রােজ শুকিয়ে যাচ্ছে। ডাক্তারে ভয় দেখাচ্চে
পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৭
পরিভ্রমণে চলুন
অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
নূতন অবতার
৫৩