এ জায়গা না ছাড়লে আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না। কী করি বলাে তাে দাদা! রুদ্দুর বক্শি ছিলুম, সুখে ছিলুম, কোনো ল্যাঠাই ছিল না—ভগীরথ হ’য়ে কোনাে দিক সাম্লে উঠতে পার্চিনে—আমার সােনার পুরী একেবারে শ্মশান হ’য়ে গেচে। আবার কাগজগুলো আজকাল আমার সঙ্গে লেগেচে—তা’রা বলে সব মিথ্যে। তাদের নামে লাইবেল আন্বার জন্যে উকিলের পরামর্শ নিতে গিয়েছিলুম—উকিল ব’ল্লে, তুমিই যে ভগীরথ সেটা প্রমাণ ক’র্তে গেলে সত্য যুগ থেকে সাক্ষী তলব ক’র্তে হয়—স্বয়ং ব্যাসদেবের নামে শমন জারি ক’র্তে হয়। শুনে আমার ভরসা হ’লাে না। এখানকার লােকের মনেও ক্রমে সন্দেহ জন্মে গেচে;—মতি গয়লানীর সঙ্গে একরকম ঠিক হ’য়েছিলো আমি পদোদক দেবো আর সে দুধ দেবে—আজ দু-দিন থেকে সে মাগী আবার তা’র হিসেব নিয়ে এসে উপস্থিত হ’য়েচে। ভাবে গতিকে স্পষ্ট বুঝতে পারচি টাকার বদলে আমি তাকে পায়ের ধূলো দিতে গেলে সে-ও আমার উপরে পায়ের ধূলো ঝেড়ে যাবে, ভয়ে কিছু ব’ল্তে পার্চিনে। পুকুরটা তো গেচেই, আমার স্ত্রী পুত্র কন্যারাও ছেড়ে গেচে, চাকর দাসী ও পালিয়েছে, প্রতিবেশীরাও গ্রাম ছেড়ে নতুন বসতি করেচে,আমার ভগীরথ নামটাও টেঁকে কি না সন্দেহ, কেবল কি একা মা গঙ্গা আমাকে কিছুতেই ছাড়বেন না? মা গঙ্গাকে নিয়ে কি আমার সংসার চ’ল্বে? রাস্তায় বেরােলে আজকাল ছেলেগুলো ঠাট্টা ক’র্তে আরম্ভ ক’রেচে যে রুদ্দুর বক্শির গঙ্গাপ্রাপ্তি হ’য়েছে।— এই তো বিপদে পড়া গেচে! দাদা, আবার একবার তােমাকে স্বপন দেখ্তে হচ্চে! দোহাই তােমার, দোহাই মা গঙ্গার, হুগ্লির পুলের নীচে যদি তাঁর বাসের অসুবিধে হয়, দেশে বড়ো বড়ো ঝিল খাল দীঘি র’য়েচে, স্বচ্ছন্দে থাক্তে পার্বেন। আমার ঐ পুকুরের জল যে রকম হ’য়ে এসেচে আর দু-দিন বাদে তাঁর মকরটা তা’র শুঁড়সুদ্ধ ম’রে ভেসে উঠবে; আমার মতাে ভগীরথ ঢের
পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৮
অবয়ব
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৪
ব্যঙ্গকৌতুক
