পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অরসিকের স্বর্গপ্রাপ্তি
৫৭

—হাতচিঠা, কি রসিদ, কি কোনাে রকমের একটা নিদর্শন রাখা হয়? শচীঠাক্‌রুণ বােধ করি মনে মনে রাগ ক’র্‌লেন—স্বর্গ সৃষ্টি হ’য়ে অবধি এ রকম প্রশ্ন তাঁকে কেউ জিজ্ঞাসা করে নি। যা পাব্লিকের জিনিষ তা’র একটা রীতিমত জবাবদিহি থাকা চাই, সে বােধটা এদের কারো দেখ্‌তে পাইনে। অজস্র আছে ব’লেই কি অজস্র খরচ ক’র্‌তে হবে? যদি আমাকে বেশি দিন এখানে থাক্‌তেই হয় তা হলে স্বর্গের সমস্ত বন্দোবস্ত আগাগােড়া রিফর্ম্ম না ক’রে আমি ন’ড়চিনে। আমি দেখ্‌চি, গােড়ায় দরকার অ্যাজিটেশন্—ঐ জিনিষটা স্বর্গে একেবারেই নেই— সব, দেবতাই বেশ সন্তুষ্ট হ’য়ে ব’সে আছেন। এঁদের এই তেত্রিশকোটিকে একবার রীতিমত বিচলিত ক’রে তুল্‌তে পার্‌লে কিছু কাজ হয়। এখানকার লােকসংখ্যা দেখেই আমার মনে হ’য়েছিলাে এখানে একটি বড়ো রকমের দৈনিক কিম্বা সাপ্তাহিক খবরের কাগজ বেশ চালানো যেতে পারে। আমি যদি সম্পাদক হই, তা হ’লে আর দুটি উপযুক্ত সাবএডিটার পেলেই কাজ আরম্ভ ক’রে দিতে পারি। প্রথমত নারদকে দিয়ে খুব এক চোট্ বিজ্ঞাপন বিলি ক’র্‌তে হয়। তা’র পরে বিষ্ণুলােক ব্রহ্মলােক চন্দ্রলােক সূর্য্যলােকে গুটিকতক নিয়মিত সংবাদদাতা নিযুক্ত ক’র্‌তে হয়—আহা, এই কাজটি যদি আমি ক’রে যেতে পারি তা হ’লে স্বর্গের এ চেহারা আর থাকে না। যাঁরা সব দেবতাদের ঘুষ দিয়ে দিয়ে স্বর্গে আসেন, প্রতি সংখ্যায় তাঁদের যদি একটি করে সংক্ষেপ মর্ত্যজীবনী বের ক’র্‌তে পারি তা হ’লে আমাদের স্বর্গীয় মহাত্মাদের মধ্যে একটা সেন্সেশন্ প’ড়ে যায়!—একবার ইন্দ্রের কাছে আমার প্রস্তাবগুলাে পেড়ে দেখ্‌তে হবে!

 (ইন্দ্রের নিকট গিয়া) দেখুন মহেন্দ্র, আপনার সঙ্গে আমার গােপনে কিছু (অপ্সরাগণকে দেখিয়া) ও! আমি জান্‌তুম না এঁরা সব এখানে আছেন—মাপ ক’র্‌বেন—আমি যাচ্ছি!—এ কি, শচীঠাক্‌রুণও