পাতা:ব্যঙ্গকৌতুক - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৪
ব্যঙ্গকৌতুক

হব্য পদার্থে আমার কিছুমাত্র লােভ নাই, এবং হােমাগ্নির তিরােধান সম্বন্ধেও আমি আক্ষেপ করিতেছি না। আমার বক্তব্য এই যে, যেমন পুষ্প হইতে সৌরভ উত্থিত হয় তেমনি মর্ত্ত্যের ভক্তি হইতেই স্বর্গ ঊর্দ্ধলােকে উদ্বাহিত হইতে থাকে; সেই ভক্তিপুষ্প যদি শুষ্ক হইয়া যায় তবে হে দ্বিজসত্তম, তেত্রিশ কোটি দেবতাও আমার এই পারিজাতমােদিত, নন্দনবনবেষ্টিত স্বর্গলােক রক্ষা করিতে পারিবে না। সেই কারণে, মর্ত্ত্যের সহিত যােগ প্রবাহ রক্ষা করিবার জন্য মাঝে মাঝে নরলােকের নবনির্ব্বাচিত দেবতাগুলিকে সাদরে স্বর্গে আবাহন করিয়া আনিতে হয়। হে ত্রিকালজ্ঞ, স্বর্গের ইতিহাসে এমন ঘটনা ইতিপূর্ব্বেও ঘটিয়াছে।

 বৃহস্পতি। মেঘবাহন, সে সমস্ত ইতিহাস আমার অগােচর নাই। কিন্তু ইতিপূর্ব্বে যে-সকল নূতন দেবতা মর্ত্ত্য হইতে স্বর্গলােকে উন্নীত হইয়াছিলেন তাঁহারা অভিজাত দেবগণের সহিত একাসনে বসিবার উপযুক্ত। সম্প্রতি ঘেঁটু প্রমুখ যে সমস্ত দেবতাগণ তােমার নিমন্ত্রণে স্বর্গে আসিয়া আশ্রয় লইয়াছেন তাঁহারা সুরসভার দিব্যজ্যোতি ম্লান করিয়া দিয়াছেন। অদিতিনন্দন, আমার প্রস্তাব এই যে, তাঁহাদের জন্য একটি উপদেবলােক সৃজন করিবার জন্য বিশ্বকর্মার প্রতি বিশেষ ভারার্পণ করা হয়।

 ইন্দ্র। বুধপ্রবর, তাহা হইলে সেই উপস্বর্গই স্বর্গ হইয়া দাঁড়াইবে এবং স্বর্গ উপসর্গ হইবে মাত্র। একমাত্র বেদমন্ত্রের উপর আমাদের স্বর্গ প্রতিষ্ঠিত। জম্মনদেশীয় পণ্ডিতগণের বহুল চেষ্টা সত্ত্বেও সে মন্ত্র এবং তাহার অর্থ সকলে বিস্মৃত হইয়া আসিয়াছে। কিন্তু আমাদের নূতন আমন্ত্রিত দেবদেবীগণ সায়নাচার্য্যের ভাষ্য, পাশ্চাত্য ঐতিহাসিকদের পুরাতত্ত্ব অথবা তাঁহাদের প্রাচ্যশিষ্যবর্গের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করিতেছেন না, তাঁহারা প্রতিদিনের সদ্য আহরিত পূজা প্রাপ্ত হইয়া উপবাসী পুরাতন দেবতাদের অপেক্ষা অনেক গুণে প্রবল হইয়া