পাতা:ব্রজবিলাস - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চম উল্লাস।
৪৯

নয়, অমনি তোমর পটোলকে, নরকে দিলে; যেই আমি বলিলাম, পটোল বড় মন্দ তরকারি নয়, অমনি তোমরা পটোলকে স্বর্গে তুলিলে। উমেদারেরা কহিলেন, মহাশয়, আপনি অন্যায় আজ্ঞা করিতেছেন। আমরা ঝোলের উমেদার নই, পটোলেরও উমেদার নই, উমেদার আপনকার; আপনি যাহাতে খুসি থাকেন, তাহাই আমাদের সর্ব্ব প্রযত্নে কর্ত্তব্য। এই উত্তর শুনিয়া, বাবু নিরুত্তর হইলেন।

 শ্রীমান্ বিদ্যাবাগীশ খুড় মহাশয়েরা এই মনোহর উপাখ্যানের প্রকৃত দৃষ্টান্তস্থল। তাঁহারা শাস্ত্রেরও উমেদার নহেন, ধর্মেরও উমেদার নহেন; তাঁহারা উমেদার পয়সার; পয়সাওয়ালার যাহাতে খুসি থাকেন, তাহাই, তাঁহাদের সর্ব্ব প্রযত্নে কর্তব্য বলিয়া, নির্বিবাদে স্থিরীকৃত হইয়া রহিয়াছে।

 যদি বলেন, সকল পয়সাওয়ালারা ত পয়সা দেন না, তবে কি জন্য তাঁহাদের সকলকে খুসি করিবার চেষ্টা করিবেন। ইহার উত্তর এই, খুড় মহাশয়েরা, গুড়কলসপিপীলিকা। গুড়ের কলসীর মুখ এমন বন্ধ করা আছে যে, তাহাতে কোনও মতে প্রবেশ করিবার সম্ভাবনা নাই; সুতরাং, গুড় খাইতে পাওয়ার প্রত্যাশা সুদুরপরাহত; তথাপি পিপীলিকারা, গুড়ের গন্ধেই মাত হইয়া, কলসীর চারি দিকে, সারি বাঁধিয়া, ঘুরিয়া বেড়াইতে থাকে। সেইরূপ, বিদ্যাবাগীশ পুড় মহাশয়েরা, পয়সা পান না পান, পয়সার গন্ধে অন্ধ হইয়া, যদি পাই এই প্রত্যাশায়, পয়সাওয়ালার গদির নীচে গরুড়ের ন্যায়।