পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৯২
দশম উপদেশ।

নার প্রকৃত অধিপত্য স্থাপন করিবে। যখন এই প্রকার আমাদের জ্ঞান, প্রীতি ও ইচ্ছা ঈশ্বরের জ্ঞান, প্রীতি, ইচ্ছার সহিত মিলিত হইতে থাকিবে, তখন আমরা মুক্তি লাভ করিয়া কৃতার্থ হইতে থাকিব।

 ব্রাহ্মধর্মের এই প্রকার মুক্তির ভাব অন্যান্য ধর্ম্মের সহিত তুলনা করিয়া দেখিলে এ ধর্ম্মের মাহাত্ম্য স্পষ্ট রূপে বুঝা যায়। কোন কোন পণ্ডিতেরা বলেন, জীবত্ব গিয়া ঈশ্বর হইয়া গেলে জীবের মুক্তি হইবে। ব্রাহ্মধর্মের মুক্তি ঈশ্বরের অধীন হইয়া থাকা; তাঁহাদের মুক্তি ঈশ্বর হইয়া যাওয়া। বস্তুতঃ তাহাতে জীবের ঈশ্বরত্ব হয় না, তাহাকে বিনাশ করিয়া ফেলা হয়। সংসারের অধীন না হইয়া ঈশ্বরের যে অধীনতা, তাহাতেই যথার্থ মুক্তি। যাঁহারা বলেন, জীব ঈশ্বর হইয়া যাইবে, তাঁহারা তাহাকে বিনাশ করিয়া ফেলেন। তাহাতে এই হয় যে ঈশ্বর যেমন আছেন, তেমনই থাকিবেন; জীবেরাই লয় হইয়া যাইবে। আমাদের আন্তরিক স্পৃহা এই যে ঈশ্বরের অধীন হইয়া থাকি; ঈশ্বর হইয়া যাই, ইহাতে আমাদের কোন ভাবই সায় দেয় না। তাহা হইলে আপনাকে বিনাশ করিয়া ফেলা হয়, ব্রাহ্মধর্ম্মের এ প্রকার নির্ব্বাণ মুক্তি নহে। শুদ্ধ-বুদ্ধ-মুক্তস্বরূপের অধীন হওয়াই মুক্তি। বৈদান্তিক পণ্ডিতেরা বলেন যে যাহা দেখিতেছি তাহার বাস্তবিক সত্তা নাই; একমাত্র ঈশ্বরই আছেন, আর সকলই অসৎ, সকলই মায়া। তাঁহাদের এ বাক্য কল্পনা মাত্র। এই জগৎ যাহা আমরা দেখিতেছি, তাহা সত্য; কেন না তাহা সেই সত্য স্বরূপ-