পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
পঞ্চম উপদেশ।

দের সংসারে বিরাগ। গৃহত্যাগী হইয়া অরণ্যে বাস করাতেই যে বৈরাগ্য হয়, তাহা নহে। ঈশ্বরে অনুরাগই যথার্থ বৈরাগ্যপথ। ধর্মই সেই পথের প্রদর্শক। আমরা কুপ্রবৃত্তির উপরে ধর্ম্মকে যত বার জয়ী হইতে দিই—ধর্ম্মের সুতীব্র ভর্ৎসনাতে স্বার্থপরতার কুটিল মন্ত্রণাকে যতবার নিরস্ত করি; ততই আমরা বল পাই, ততই আমারদের শিক্ষা হয়—বিষয়ের প্রতিস্রোতে যাইবার জন্য ততই প্রস্তুত হই। বিষয়-বন্ধন হইতে মুক্ত হওয়াই আমারদের। মুক্তি। পাপ হইতে দূরে থাকিবার যে চেষ্টা, সেই চেষ্টাই আমারদের উৎকৃষ্ট শিক্ষা। ঈশ্বরে যে অটল অনুরাগ, সেই অনুরাগই আমারদের প্রকৃত বৈরাগ্য।

 ঈশ্বরানুরাগের যে প্রকার স্বর্গীয় ভাব,—ধর্ম্মের যে প্রকার মাহাত্ম্য, তাহাতেই সুস্পষ্ট প্রতীতি হয় যে তাহা কেবল ইহ লোকের জন্য নহে। গর্ভস্থিত বালকের সুচারু অঙ্গসৌষ্ঠব ও কর্ম্মক্ষম ইন্দ্রিয় সকল দেখিলে যেমন তাহাকে চিরকাল গর্ভে থাকিবারই উপযুক্ত বোধ হয় না, কিন্তু এই কর্ম্মক্ষেত্র পৃথিবীর উপযুক্ত বলিয়া মনে হয়। সেইরূপ মনুষ্যের নিষ্কাম ধর্ম্মের অনুষ্ঠান—ঈশ্বরে নিস্বার্থ অনুরাগ দেখিয়া তাহাকে ভাবী কালের মহত্তর উচ্চতর অবস্থার উপযুক্ত বোধ হয়। এই সকল ভাব পৃথিবীর ভাব হইতে এত উচ্চতর, যে এখানে তাহাদের সম্যক্ চরিতার্থতা কখনই হয় না। বিষয়-সুখ অকাতরে বিসর্জন দেওয়া—পৃথিবীর খ্যাতি প্রতিপত্তিকে তুচ্ছ করা—কেবল এই পৃথিবীর জীবের পক্ষে কখনই সম্ভব হয় না।