পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরনুরাগ এবং বিষয়-বিরাগ।
৩৩

 যাহারা কেবল বিষয়-সুখের প্রতি লক্ষ্য করিয়া স্বর্গীয় ধর্ম্মকে প্রার্থনা করে, তাহাদের অতি নীচ লক্ষ্য। স্বোপর্জিত দুর্ল্লভ ধর্ম্ম-রত্নের বিনিময়ে ক্ষুদ্র বিষয়-সুখ কদাপি প্রার্থনীয় হইতে পারে না। ধর্ম্মের উপযুক্ত লক্ষ্য, ধর্ম্মের যোগ্য পুরস্কার, কেবল সেই ধর্ম্মাবহ একমাত্র পরমেশ্বর। ধর্ম্মপথ মধ্য পথ। ধর্ম্ম সংসার-বন্ধন রক্ষা করেল, ধর্ম্ম মোক্ষের সেতু হইয়া ঈশ্বরের নিকটে লইয়া যান। বিষয়সুখ ভোগের জন্য যে ধর্ম্ম, তাহা অতি নিকৃষ্ট—ঈশ্বরের জন্য যে ধর্ম্ম, তাহাই উৎকৃষ্ট ধর্ম্ম। আমরা প্রাণ পর্যন্ত পণ করিয়া যে ধর্ম্মকে উপার্জন ও রক্ষা করি; পার্থিব কোন বস্তু তাহার সম্যক্ লক্ষ্য কখনই হইতে পারে না। বিষয়-সুখের জন্য কে প্রাণ দিতে পারে? কিন্তু ধর্ম্মের জন্যই প্রাণ দেওয়া যায়। বিষয়-সুখকে যদি ধর্ম্মের পুরস্কার মনে করা যায়—স্বার্থপরতার চরিতার্থতা যদি ধর্ম্ম সাধনের উদ্দেশ্য হয়; তবে সে ধর্ম্ম রক্ষা করা বিষম দায়। বহু আয়াসে, বহু দিবসে, বহু কষ্টে, যদি সে ধর্ম্ম কিছু রক্ষা হয়; তবে পরম সৌভাগ্য। ধর্মকে যাহারা কেবল বিষয় উপভোগের উপায় করে, তাহারদের নিকটে ধর্ম্ম রক্ষার কত ব্যাঘাত, কত প্রতিবন্ধক। যখন ধর্ম্মের সঙ্গে সুখের সঙ্গে বিরোধ উপস্থিত হয়; তখন সেই সুখ বিসজন তাহাদের কি কষ্ট। ধর্ম্ম যখন গম্ভীরস্বরে ত্যাগের আদেশ প্রদান করে, তখন বিষয় ত্যাগ তাহাদের কি তক্ত বোধ হয়। তাহাদের লক্ষ্য কেবল সুখ, ধর্ম্ম কেবল তাহাদের উপায় মাত্র; এই হেতু ধর্ম্ম রক্ষা তাহাদের