পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরানুরাগ এবং বিষয়-বিরাগ।
৩৫

ঈশ্বরে অনুরাগ অনুভব না হয়, ধর্ম্মই ক্রমে তাহাদের মনে সেই অনুরাগ উদ্দীপন করেন। স্বার্থপরতার বিপরীত ভাব ঈশ্বরে অনুরাগ—ধর্ম্ম মধ্যবর্ত্তী শিক্ষা গুরু।

 ধর্ম্মেতে যাঁহারদিগের শ্রদ্ধা জন্মিয়াছে; ধর্ম্মের নৈসগিক সৌন্দর্য্য ও পাপের স্বাভাবিক মলিনত্ব যাঁহার প্রতীতি করিয়াছেন; তাঁহারা যে ঈশ্বরের পথেরই অভিমুখী, তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। বিষয় ত্যাগ, বিষয় বিসর্জন, প্রথমে ধর্ম্মের উপদেশে এসকলের শিক্ষা হয়। ধর্ম্মের অনুরোধে যত টুকু ত্যাগ স্বীকার করিতে পারি—বিষয়ের যত প্রতিকুলগামী হই—ঈশ্বরের পথে ততই অগ্রসর হইতে থাকি; ঈশ্বরের নিকটে যাইবার জন্য ততই বল পাই। বিষয় হইতে মন যত আকৃষ্ট হয়, বিষয়ের অতীত পদার্থের প্রতি ততই ধাবমান হয়। এদিকে যে পরিমাণে বিরাগ উপস্থিত হয়, ঈশ্বরে অনুরাগ সেই পরিমাণে উজ্জ্বল হইতে থাকে। ঈশ্বরে অনুরাগ যেমন প্রবল হইতে থাকে, তেমনি ধর্ম্মবল আরো বৃদ্ধি হয়, বিষয়াকর্ষণ আরো ক্ষীণ হয়। অতএব প্রথমে যাঁহার ধর্ম্মের প্রতি, কর্ত্তব্যের প্রতি শ্রদ্ধা হয়, ইহা নিশ্চয়, যে ঈশ্বর তাঁহার অনুরাগ শীঘ্রই তাঁহার মনে উদ্দীপন করেন। ঈশ্বর তো সর্ব্বত্রই তাঁহার ক্রোড় প্রসারিত করিয়া রাখিয়াছেন এবং প্রতিক্ষণেই আমারদিগকে আহ্বান করিতেছেন; আমরা তাঁহার সন্নিধানের উপযুক্ত হইলেই তিনি আমারদিগকে গ্রহণ করেন। তাঁহার নিকটে লইয়া যাইবার জন্য ধর্ম্মই প্রথমে আমাদের সহায় হয়েন।