পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঈশ্বরানুরাগ এবং বিষয়-বিরাগ।
৩৭

হইলে ত্যাগ তো স্বীকার করিতেই হইবে—বিষয়-সুখ হইতে তো অনেক সময় পরিচ্যুত হইতেই হইবে—কুপ্রবৃত্তির বিপরীত পথে তো অনেকবার গমন করিতেই হইবে। আমারদের যদি মূলধন সঞ্চিত থাকে, তবে অতিরিক্ত ধনের ক্ষতিতে তেমন বিশেষ ক্ষতি বোধ হয় না। ঈশ্বরকে যিনি মূলধন রূপে সঞ্চিত করিয়া রাখিয়াছেন, বিষয় ত্যাগে তাহার ক্ষতির সম্ভাবনা নাই। যিনি সকল সম্পদের সমুদ্রকে প্রাপ্ত হইয়াছেন, বিষয় বিপদকে তাঁহার বিপদ বোধ হয় না। তিনি সুখের সময় সেই সর্ব্বসুখদাতার প্রতি কৃতজ্ঞ হইয়া সেই সুখকে দ্বিগুণিত করেন, এবং বিপদের সময় তিনি সেই সর্ব্বাশ্রয় পরমেশ্বরের আশ্রয়ে থাকিয়া নির্ভয়ে বিচরণ করেন। পাপই তাঁহার নিকটে অমঙ্গল; দুঃখও বাস্তবিক অমঙ্গল নহে, বিপদও বাস্তবিক অমঙ্গল নহে। আত্মার কিসে আত্ম-প্রসাদ থাকে—ঈশ্বর কিসে নিরন্তর জ্ঞান-চক্ষে প্রকাশিত থাকেন; ইচ্ছাতেই তাঁহার প্রাণগত যত্ন—এবং তদনুরূপ আচরণে তৎপর থাকেন। কিসে লোকে মান্য হইব, এজন্য তাঁহাকে কষ্ট পাইতে হয় না, ঈশ্বর হইতে পাছে বিচ্যুতি হয়, এই ভয়েই তিনি পাপ হইতে দূরে থাকেন; লোকেরা পাছে মন্দ বলে, ইহারই প্রতি দৃষ্টি রাখিয়া তাঁহার কপটতা কুটিলতা ছদ্মতা অভ্যাস করিতে হয় না।

 যাঁহারা ধর্ম্মেতে অনেক সময় বিষয়-সুখের হানি দেখিয়া ঈশ্বরের মঙ্গল-স্বরূপে দোষারোপ করেন, তাঁহারা ধার্ম্মিকদিগের বৃদ্ধ-বয়সে যৌবন কালের বল বীর্য উদ্যমের