পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫২
সপ্তম উপদেশ।

দের নিকটে তাহাদের থাকা আর না থাকা সমান হইত। আমি একই বস্তু, এই জন্যই আমার ভঙ্গ হইতে পারে না। শরীর পরমাণু বিশিষ্ট, অতএব সেই সকল পরমাণু পৃথক্ হইলে সে শরীর ভগ্ন হইতে পারে, কিন্তু আত্মা একই, তাহার বিনাশও নাই এবং ভঙ্গও নাই।

 এখানে আমাদের আত্মা শরীরে বদ্ধ রহিয়াছে। কেহ কেহ বলে যে শরীর হইতে মুক্ত হইলেই আত্মার বিনাশ হইবে। একি নিদারুণ উক্তি, একি নিদারুণ বিশ্বাস। কারারুদ্ধ ব্যক্তিকে যদি এই প্রকার আশ্বাস দেওয়া যায় যে তুমি যতদিন বদ্ধ আছ, ততদিনই তোমার মঙ্গল; মুক্ত হইলেই তোমার মৃত্যু; তাহা হইলে তাহার কষ্ট কি দুর্ব্বিষহ হইয়া উঠে। আমাদের শরীরই কারাগৃহ। ইহাতে আত্মার স্বাভাবিক স্ফুর্ত্তি ও প্রভা নিরুদ্ধ হইয়া রহিয়াছে। মনুষ্য আহার নিদ্রা ব্যতীত জীবন ধারণ করিতে পারে না; কিন্তু তিনি আহার নিদ্রার জন্যও জীবন ধারন করেন নাই। শরীরের সহিত আত্মার অস্থায়ী স্বম্বন্ধ; কিন্তু কেবল এই শরীরের লালন পালনেই হয়তো মনুষ্যের সমস্ত জীবন গত হয়। কাচ যেমন ভূমিতে পড়িলেই খণ্ড খণ্ড হয়, শরীরও সেই প্রকার। একবার মাত্র নিঃশ্বাস রুদ্ধ হইলে শরীরের প্রাণ বিয়োগ হয়। এখানে আত্মার স্বাভাবিক স্বাধীনত্ব কত সময়ে বিনাশ প্রাপ্ত হইতেছে এবং সে দাসের ন্যায় এই শরীরের উপরে কত বিষয়ে নির্ভর করিতেছে। এক এক সময়ে আমাদের মনের ভাব এত অধিক হয়, এত গাঢ়