পাতা:ব্রাহ্মধর্ম্মের মত ও বিশ্বাস - দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৮০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বর্গ ও নরক।
৬৯

দণ্ডের জন্যই তাঁহার দণ্ড দিবার তাৎপর্য্য নহে কিন্তু পাপীর পরিত্রাণের জন্য। সেই প্রকার ঈশ্বর অবশ্য ধর্ম্মের পুরস্কার দিবেন। কিন্তু পুরস্কারের জন্য আমাদের ধর্ম্ম নহে। আমরা কি প্রত্যাশাপন্ন হইয়া ধর্ম্ম সাধন করিব? কখনই না। ঈশ্বর সুখকে আমাদের পরম পুরস্কার করিয়া রাখেন নাই; কিন্তু সুখ আমাদের অন্ন স্বরূপ; সেই অম্নে আমরা বল পাইয়া আরো প্রকৃষ্ট রূপে ধর্ম্ম সাধন করিতে পারি, এই তাহার অভিপ্রায়। আমরা ধর্ম্ম সাধন করিয়া ধর্ম্ম-বল উপার্জ্জন করিলাম; ঈশ্বরের নিকটবর্ত্তী হইলাম; এই আমাদের পুরস্কার; ইহা অপেক্ষা আর অধিক কি চাই? আমরা পাপ-কলঙ্ক হইতে মুক্ত হইয়া, সত্যতা পবিত্রতা অর্জন করিয়া, পুণ্য সঞ্চয় করিয়া, স্বাধীনতা উপার্জ্জন করিয়া, পরিশেষে এক আমাদের লক্ষ্য এই হইল যে স্বর্গে গিয়া একটুকু সুখ ভোগ করিব? ধর্ম্ম উপার্জ্জন করিয়া আমাদের লক্ষ্য ঈশ্বরের দিকেই যায়। আমরা ধর্ম্ম সাধন করিয়া সেই পবিত্র-স্বরূপকে পাইবার অধিকারী হই।

 সংসারিক সুখ-ভোগের জন্য ধর্ম্মাচরণ যে প্রকার, স্বর্গ লাভের জন্য ধর্ম্ম-সাধনও সেই প্রকার। স্বার্থপরতা কি পরলোক পর্যন্তু বিস্তৃত হইলেই তাহা ধর্ম্মের বেশ ধারণ করিল? যদি অল্প পুরস্কারের জন্য ধর্ম্ম-সাধন প্রকৃত ধর্ম্ম না হয়, তবে অধিক পুরস্কারের জন্য যে ধর্ম্ম সেই কি পবিত্র ধর্ম্ম? এক রজত মুদ্রাতে লুব্ধ হওয়াও যাহা, এক শত মুদ্রাতেও সেই প্রকার, বরং অধিক; এবং স্বর্গ সুখ-ভোগের