পাতা:ভগ্নহৃদয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
ত্রয়োদশ সর্গ।
১১৫

মাঝে মাঝে হৃদাকাশে যদিও বা মেঘ আসে,
ভিতরে তবুও হাসে সে রবি-কিরণ প্রিয়া!
ওই স্মিত আঁখি দুটি হৃদয়ে রহিয়া ফুটি
রেখেছে ফুল ফুটায়ে প্রাণের বিজন বনে!
তব প্রেম সুধাধারা ঝরিয়া নির্ঝর পারা
তুলেছে হরিত করি এই মরুভূমি মনে!
তব হাসি জ্যোৎস্না সম এ মুগ্ধ নয়নে মম
সারা জগতের মুখে ফুটায়ে রেখেছে হাসি।
তুমি সদা আছ কাছে তাই দিবালোক আছে,
নাহিলে জগতে মোর কাঁদিত আঁধার রাশি;—
আয় সখি—বুকে আয়—উলসি উঠেছে প্রাণ—
ত্বরা কোরে যালো বালা—বাঁশি আন্-বীণা আন্—
আজি এ মধুর সাঁঝে—রাখি এ বুকের মাঝে
মধুর মুখানি তোর—ধীরে ধীরে কর্ গান?
ললিতা।—না সখা, মনের ব্যথা কোর’ না গােপন; 
যবে অশ্রুজল হায় উচ্ছ্বসি উঠিতে চায়,
রুধিয়া রেখোনা তাহা আমারি কারণ।
চিনি সখা, চিনি তব ও দারুণ হাসি,
ওর চেয়ে কত ভাল অশ্রুজল রাশি।
মাথা খাও—অভাগীরে কোরনা বঞ্চনা,
ছদ্মবেশে আবরিয়া রেখোনা যন্ত্রণা;
মমতার অশ্রুজলে নিভাইব সে অনলে
ভাল যদি বাস’ তবে রাখ’ এ প্রার্থনা!