পাতা:ভগ্নহৃদয় - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/৫০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৪৪
ভগ্নহৃদয়।

মাথার উপর দিয়া তারাগুলি যত
একটি একটি করি হবে অস্তগত।
শ্রান্তি তৃপ্তি নাহি জানি ও মুখের প্রতি বাণী
তৃষিত শ্রবণে মোর শুনিতে শুনিতে
কখন্ প্রভাত হোল নারিব জানিতে।
অনিল।—জানত—জানত সখি, মানুষের মন? 
যে কথা সে ভালবাসে শত শতবার তা’সে
ঘুরে ফিরে শুনিবারে চায় প্রতিক্ষণ।
জানি, ভালবাস’ তুমি, ললিতা, আমারে,
তবু সখি প্রতিক্ষণে বড় সাধ যায় মনে
বাহিরে সে প্রেমের প্রকাশ দেখিবারে।
দুদিনে নীরব-প্রেম হয় পুরাতন।
বিচিত্রতা নাহি তায়, শ্রান্ত হয় মন।
আদর তরঙ্গ-মালা নিয়ত যে করে খেলা,
তাইতে দেখায় প্রেম নিয়ত-নূতন।
নিত্য নব নব উঠি আদরের নাম
নিয়ত নবীন রাখে প্রণয়ের ধাম।
আদর প্রেমের, সখি, বরষার জল—
না পেলে আদর-ধারা হয় সে যে বলহারা,
ভুমে নুয়াইয়া পড়ে মুমূর্ষু বিকল।
ওকি বালা, কেন হেন কাতর নয়ানে
এক দৃষ্টে চেয়ে আছ ভুমি-তল পানে!
হাসিতে হাসিতে, সখি; দুটা ক্ষুদ্র কথা
কহিনু, তা’তেই মনে পেয়েছ কি ব্যথা?