বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ভবিষ্যতের বাঙালী.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩
ভবিষ্যতের বাঙালী

অন্তরের সঙ্গে সে ভালবাসে; ধর্ম্মের বিষয়ে সে উদার মত পোষণ করে; গোড়ামি সে মোটেই পছন্দ করে না। বিদেশের আমদানী করা কৃত্রিম উত্তেজনা কখনও কখনও বাঙালীর মনে ধর্ম্মের গোড়ামির সৃষ্টি করে বটে, কিন্তু সে মনোভাব বেশী দিন স্থায়ী হয় না। কেন না, ধর্ম্ম বিষয়ে সঙ্কীর্ণতা বাঙালীর প্রকৃতিবিরুদ্ধ। নুতনের প্রতি একটা স্বাভাবিক ভালবাসা বাঙালী তার অন্তরে পোষণ করে। নূতন ভাব, নূতন প্রথা, নূতন আদর্শকে নূতন বলেই সে বর্জন করে না; পক্ষান্তরে যাচাই ক’রে নূতনের মূল্য নিরূপণ করতে চায় কায়িক পরিশ্রমের চেয়ে ভাবের চর্চাই বাঙালীর বেশী প্রিয় সুযোগ এবং সুবিধা পেলেই সে কাজকর্ম্ম ছেড়ে ভাবের চর্চায় বিভোর হয়ে যায়। নাগরিক জীবনের চেয়ে বাঙালী পল্পী জীবন ও স্বভাবী - সৌন্দর্য্যকে বেশী পছন্দ করে। বাংলার ইতিহাস ধর্ম্মের উৎকট দ্বন্দ্ব কলঙ্কিত নয়। বাংলার হিন্দু ও মুসলমান সহজে এবং স্বচ্ছন্দে পাশাপাশি বাস করে। এক নিবিড় আত্মীয়তা এবং ঐক্য স্থাপন করেছে। তাদের এক জাতি বলতে এখন আর দ্বিধাবোধ হয় না। বাঙালী জাতির অর্থনৈতিক স্বার্থ এবং সমস্যা এক। আর বাঙালীর অর্থনৈতিক স্বার্থ ভারতের অন্যান্য প্রদেশের লোকের অর্থনৈতিক স্বাথ থেকে ভিন্ন। প্রকৃতি দেবীই স্বার্থের এই বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। হিন্দু এবং মুসলমান―এই দুই প্রধান ধর্ম্মসম্প্রদায়ের লোকসংখ্যা এবং প্রভাব–প্রতিপত্তি এইদেশে প্রায় সমান–সমান। তাই এই সম্প্রদায়ের উপর অন্য সম্প্রদায়ের প্রভৃত্বের সমস্যা প্রকৃতপক্ষে এদেশে ওঠে না: তারপর ইউরোপীয় সভ্যতার সঙ্গে দীর্ঘ এবং ঘনিষ্ঠ সংস্রবের ফলে বাংলা দেশে এমন এক কৃষ্টি এসে দেখা দিয়েছে, যার দৃষ্টি স্বভাবতঃই ভবিষ্যতের