পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভানুসিংহের পত্রাবলী
১২১

 তুমি কখনো এখানে আসোনি, সুতরাং জান্‌তে পারবে না—জায়গাটা কী রকম। বোলপুরের সঙ্গে এখানকার চেহারার কিছুমাত্র মিল নেই। সেখানকার রৌদ্র বিরহীর মতো, মাঠের মধ্যে একা ব’সে দীর্ঘনিশ্বাস ফেল্‌চে, সেই তপ্ত নিশ্বাসে সেখানকার ঘাসগুলো শুকিয়ে হ’ল্‌দে হ’য়ে উঠেচে। এখানে সেই রৌদ্র তা’র সহচরী ছায়ার সঙ্গে সঙ্গে মিলেচে; তাই চারিদিকে এত সরসতা। আমাদের বাড়ির সাম্‌নে সিসু-বীথিকায় তাই দিনরাত মর্ম্মরধ্বনি শুন্‌চি, আর কনকচাঁপার গন্ধে বাতাস বিহ্বল, কয়েৎবেলের শাখায় প্রশাখায় নতুন চিকণ পাতাগুলি ঝিল্‌মিল্ ক’র্‌চে, আর ঐ বেণুবনের মধ্যে চঞ্চলতার বিরাম নেই। সন্ধ্যার সময় টুকরো চাঁদ যখন ধীরে ধীরে আকাশে উঠ্‌তে থাকে তখন সুপুরিগাছের শাখাগুলি ঠিক যেন ছোটো ছেলের হাত নাড়ার মতো চাঁদমামাকে টী দিয়ে যাবার জন্যে ইসারা ক’রে ডাক্‌তে থাকে। এখন চৈত্রমাসের ফসল সমস্ত উঠে গিয়েচে, ছাদের থেকে দেখ্‌তে পাচ্চি, চষা মাঠ দিক-প্রান্ত ছড়িয়ে প’ড়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে কিছু বৃষ্টির জন্যে। মাঠের যে-অংশে বাবলাবনের নীচে চাষ পড়েনি