সেখানে ঘাসে ঘাসে একটুখানি স্নিগ্ধ সবুজের প্রলেপ, আর সেইখানে গ্রামের গরুগুলো চ’র্চে। এই উদার-বিস্তৃত চষা মাঠের মাঝে মাঝে ছায়াবগুণ্ঠিত এক-একটি পল্লী—সেইখান থেকে আঁকাবাঁকা পায়েচলা পথ বেয়ে গ্রামের মেয়েরা ঝকঝকে পিতলের কলসী নিয়ে দুটি তিনটি ক’রে সার বেঁধে প্রায় সমস্ত বেলাই জলাশয় থেকে জল নিতে চ’লেচে। আগে পদ্মা কাছে ছিল— এখন নদী বহুদূরে স’রে গেচে—আমার তেতালা ঘরের জানালা দিয়ে তা’র একটুখানি আভাস যেন আন্দাজ ক’রে বুঝ্তে পারি, অথচ একদিন এই নদীর সঙ্গে আমার কত ভাব ছিল। শিলাইদহে যখনই আস্তুম তখন দিনরাত্তির ঐ নদীর সঙ্গেই আমার আলাপ চ’ল্তো; রাত্রে আমার স্বপ্নের সঙ্গে ঐ নদীর কলধ্বনি মিশে যেতো আর নদীর কলস্বরে আমার জাগরণের প্রথম অভ্যর্থনা শুন্তে পেতেম। তারপরে কত বৎসর বোলপুরের মাঠে মাঠে কাট্লো, কতকাল সমুদ্রের এপারে ওপারে পাড়ি দিলুম—এখন এসে দেখি সে-নদী যেন আমাকে চেনে না। ছাদের উপরে দাঁড়িয়ে যতদূর দৃষ্টি চলে তাকিয়ে দেখি, মাঝখানে কত মাঠ, কত গ্রামের আড়াল,
পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১২৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২২
ভানুসিংহের পত্রাবলী