পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৪২
ভানুসিংহের পত্রাবলী

ফিরে যেতে চাচ্চে। তা’র জীবনের মধ্যাহ্নে কাজও সে অনেক ক’রেচে, ভুলও কম করেনি; আজ তা’র কাজ করবার শক্তি নেই, ভুল কর্‌বার সাহস নেই। আজ জীবনের সন্ধ্যাবেলায় সে আর-একবার বিশ্বপ্রকৃতির আঙিনায় দাঁড়িয়ে আকাশের তারার সঙ্গে সুর মিলিয়ে শেষ বাঁশী বাজিয়ে যেতে চায়। যে-রহস্যলোক থেকে এই মর্ত্ত্যলোকে একদিন সে এসেছিলো সেখানে ফিরে যাবার আগে শান্তি-সরোবরে ডুব দিয়ে স্নান ক’র্‌তে চায়। তেমন ক’রে ডুব দিতে যদি পারে তা হ’লে তা’র জীর্ণতা তা’র ম্লানতা সমস্ত ঘুচে যাবে; আবার তা’র মধ্য থেকে সেই চিরশিশু বাহির হ’য়ে আস্‌বে।

 সংসারের জটিলতায় ঘিরে ঘিরে আমাদের চিত্তের উপর যে জীর্ণতার আবরণ সৃষ্টি করে সেটা তো ধ্রুব সত্য নয়, সেটা মায়া। সেটা যে-মুহূর্ত্তে কুহেলিকার মতো মিলিয়ে যায় অমনি নবীন নির্ম্মল প্রাণ আপনাকে ফিরে পায়। এমনি ক’রে বারে বারে আমরা নূতন জীবনে নূতন শিশুর রূপ ধরি। সেই নূতন জীবনের সরল বাল্যমাধুর্য্যের জন্যে আমার সমস্ত মন আগ্রহে উৎকণ্ঠিত হ’য়ে উঠেচে।