তা’র জিনিসগুলো এত বেশি ফিটফাট-যে, মনে হয় সেগুলো ব্যবহার কর্বার জন্যে নয়, সাজিয়ে রাখ্বার জন্যে। বস্বার শোবার আসবাবগুলো শুচিবায়ুগ্রস্ত গৃহিণীর মতো; সন্তর্পণে থাকে, কাছে গেলে যেন মনে মনে স’রে যায়। এই ধনী-ঘরের অতিপারিপাট্য এও যেন একটা আবরণের মতো।
আমার সেই তেতালা ঘরের চেহারা মনে পড়ে তো? সমস্ত এলোমেলো। সেখানে শোবার বস্বার জন্যে একটুও সাবধান হবার দরকার হয় না; তা’র অপরিচ্ছন্নতাই যেন তা’র প্রসারিত বাহু, তা’র অভ্যর্থনা। সে-ঘর ছোটো, কিন্তু সেখানে সবাইকেই ধরে। মানুষকে ঠিক মতো ধর্বার পক্ষে হয় ছোট্ট একটি কোণ, নয় অসীম বিস্তৃত আকাশ। ছেলেবেলায় যখন আমি পদ্মার কোলে বাস ক’র্তুম, তখন পাশাপাশি আমার দুই রকম বাসাই ছিল। একদিকে ছিল আমার নৌকোর ছোটো ঘরটি, আর-একদিকে ছিল দিগন্তপ্রসারিত বালুর চর। ঘরের মধ্যে আমার অন্তরাত্মার নিশ্বাস, আর চরের মধ্যে তা’র প্রশ্বাস। একদিকে তা’র অন্দরের দরজা, আর একদিকে তা’র সদর দরজা।