পাতা:ভানুসিংহের পত্রাবলী - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ভানুসিংহের পত্রাবলী
২৯

আসল কথা, পাহাড়টা থাকে-থাকে উপরে উঠেচে ব’লে, ডাণ্ডি ক’রে চ’ড়তে চ’ড়তে, পর্ব্বতরাজের রাজমহিমা ক্রমে ক্রমে মনের মধ্যে স’য়ে আসে। যে-জিনিষটা খুব বড়ো, আমরা একেবারে তা’র সমস্তটা তো দেখ্‌তে পাইনে—পর্ব্বত ক্রমে ক্রমে দেখি, সমুদ্র ক্রমে ক্রমে দেখি—এমন কি, যে-মানুষ আমার চেয়ে বয়সে অনেক বেশি তা’র সেই বড়ো বয়সের সুদীর্ঘ বিস্তারটা এক সঙ্গে দেখ্‌তে পাওয়া যায় না। এই জন্যে তফাৎ জিনিষটা কল্পনায় যত বড়ো, প্রত্যক্ষে তত বড়ো নয়। তার্থাৎ বড়ো হ’লেও বড়ো দেখা যায় না। আমাদের যে-ঠাকুরকে আমরা প্রণাম করি, তিনি যত বড়ো তা’র সমস্তটা যদি সম্পূর্ণ আমাদের সাম্‌নে আস্‌তো, তা-হ’লে সে আমরা সইতেই পারতুম না। কিন্তু হিমালয় পাহাড়ের মতো আমরা তাঁর বুকের উপর দিয়ে ক্রমে ক্রমে উঠি। যতই উঠি না কেন, তিনি আমাদের একেবারে ছাড়িয়ে যান না,—বরাবর আমাদের সঙ্গী হ’য়ে তিনি আমাদের আপনি উঠিয়ে নিতে থাকেন; বুদ্ধিতে বুঝ্‌তে পারি তিনি আমাদের ছাড়িয়ে আছেন, কিন্তু ব্যবহারে বরাবর তাঁ’র সঙ্গে আমাদের সহজ আনাগোনা চ’ল্‌তে থাকে। তাই তো তাঁকে বন্ধু ব’ল্‌তে আমাদের কিছু ঠেকে না—