পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

করিয়াও এইভাবে ব্রিটানিকাকে জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রামাণিক ও আধুনিকতম আকরগ্রন্থ রূপে অব্যাহত রাখা সম্ভবপর হইয়াছে। আধুনিকতম তথ্য সহজলভ্য করিবার জন্য ব্রিটানিকাতে আরও দুইটি ব্যবস্থা আছে: ১. বর্ষপঞ্জীপ্রকাশ ও ২. গবেষণাকেন্দ্র। ব্রিটানিকা বুক অফ দি ইয়ার’ নামে বর্ষপঞ্জীতে প্রতি বৎসরের যাবতীয় উল্লেখযোগ্য ঘটনা সন্নিবেশিত হয়। লাইব্রেরি রিসার্চ সার্ভিস’ নামক ব্রিটানিকার গবেষণাদপ্তর হইতে গ্রাহকবর্গের জ্ঞানবিজ্ঞানবিষয়ক প্রশ্নাবলীর উত্তর প্রদানের ব্যবস্থা আছে।

 অর্থাৎ আধুনিক বিশ্বকোষ আন্দোলনে প্রথমেই প্রয়োজন বহু বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা। তারপর এই চারিটি জিনিস অপরিহার্য: ১. স্থায়ী সম্পাদকীয় দপ্তর ২. বিরতিহীন সম্পাদনা ৩. বর্ষপঞ্জী এবং ৪. গবেষণাকেন্দ্র।

 বাংলাদেশের কোষগ্রন্থগুলি প্রথম সংকলিত হইতে থাকে উনিশ শতকের নবজাগরণের পটভূমিতে। জাতীয় চেতনার ক্রমবিকাশের ইতিহাসের সহিত এই সকল সংকলন বিশেষভাবে জড়িত হইয়া আছে। রাজা রাধাকান্ত দেব, রেভারেণ্ড কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ মনীষীর নাম এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়।

 রাধাকান্ত দেবের সংস্কৃত শব্দকল্পদ্রুম’ (১৮২২-৫৮ খ্রী) ছিল অভিধান ও বিশ্বকোষের সমন্বয়। পরিশিষ্টসহ ইহা ৮ খণ্ডে প্রকাশিত হয়। ইহার সংকলন ও প্রকাশ -কার্যে প্রায় ৪০ বৎসর সময় লাগিয়াছিল এবং বহু পণ্ডিতজনের সহযোগিতার প্রয়োজন হইয়াছিল। অজস্র অর্থব্যয়ে সম্পাদিত এই গ্রন্থ রাধাকান্ত দেব বিনামূল্যে বিতরণ করেন। দেশ-বিদেশের সুধীসমাজ ইহাকে সাদর অভিনন্দন জানান। আজ পর্যন্ত ইহার সেই সমাদর অক্ষুন্ন আছে; ইহার একাধিক সংস্করণ ও পুনর্মুদ্রণ হইয়াছে। শব্দকল্পদ্রুম প্রকাশের কিছুদিন পরে প্রসিদ্ধ পণ্ডিত তারানাথ তর্কবাচস্পতি আঠার বৎসরের চেষ্টায় অনুরূপ আর একখানি গ্রন্থ সংকলন করিয়াছিলেন। ৬ খণ্ডে সম্পূর্ণ (১৮৭৩-৮৪ খ্রী) এই গ্রন্থের নাম ‘বাচস্পত্য’ অভিধান। শব্দকল্পদ্রুমের ত্রুটি পরিপূরণের উদ্দেশ্যে ইহাতে অনেক নূতন শব্দ অন্তভুক্ত হইয়াছে এবং শব্দের ব্যুৎপত্তি নির্দেশের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হইয়াছে।

 বাংলায় বিশ্বকোষ প্রণয়নের কাজে প্রথম অগ্রসর হন উইলিয়াম কেরির পুত্র ফেলিক্স কেরি। ১৮১৯-২১ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ‘এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা’ অবলম্বনে ‘বিদ্যাহারাবলী’ নামক গ্রন্থপ্রকাশে উদ্যোগী হন। ইহার প্রথম খণ্ড ‘ব্যবচ্ছেদবিদ্যা’ এবং স্মৃতিশাস্ত্র’ নামক দ্বিতীয় খণ্ডের কিয়দংশ তিনি প্রকাশ করিয়াছিলেন। কালীকৃষ্ণ দেব বাহাদুর সংকলিত ও অনূদিত সংক্ষিপ্ত সদ্বিদ্যাবলী’র (১৮৩৩ খ্র) নামও এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য। অতঃপর কৃষ্ণমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় তাহার ‘বিদ্যাকল্পদ্রুম’ বা ‘এনসাইক্লোপিডিয়া বেঙ্গলিসিজ’ নামক গ্রন্থের ১৩টি কাণ্ড প্রকাশ করেন (১৮৪৬-৫১ খ্রী)। বিবিধ বিদ্যার আকর হইলেও ইহাকে ঠিক বিশ্বকোষ বলা চলে কিনা বিচার্য। ইহার উদ্দেশ্য ছিল সাধারণের মধ্যে বৈদেশিক জ্ঞানের আলোক বিকীর্ণ করা। বিদ্যালয় পাঠ্য গ্রন্থ হিসাবে ইহার ব্যবহার ছিল।

 তিন ভাগে ১৬৫০ পৃষ্ঠায় সমাপ্ত (১২৮৯-৯৯ বঙ্গাব্দ) ভারতবর্ষ সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়ের বিবরণপূর্ণ ‘ভারতকোষ বর্ণানুক্রমে সজ্জিত প্রসঙ্গ সংবলিত প্রথম বিশ্বকোষ। ১২৮৭ বঙ্গাব্দ হইতে ইহা খণ্ডশঃ প্রচারিত হইতেছিল; রাজকৃষ্ণ রায় ও শরচ্চন্দ্র দেব ছিলেন ইহার সংকলক। তবে এরূপ গ্রন্থের পাঠকগোষ্ঠী তখনও গড়িয়া ওঠে নাই বলিয়া ইহা তেমন সমাদর লাভ করে নাই মনে হয়।

[৯]