পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অক্ষমালা
অক্ষয়কুমার দত্ত

হন বলিয়া মনে করা হয়। জনশ্রুতি ছাড়া তাঁহার জীবনবৃত্ত সম্পর্কে কোনও নির্ভরযােগ্য বিবরণ পাওয়া যায়। পঞ্চাধ্যায়াত্মক ন্যায়সূত্রে তিনি প্রমাণাদি ঘােড়শ পদার্থের উদ্দেশ, লক্ষণ-নিরূপণ এবং পরীক্ষা করিয়াছেন। পরবর্তী কালে ন্যায়সম্প্রদায়ে প্রমাণ অংশ ক্রমশঃ প্রাধান্যলাভ করিয়াছে। বাৎস্যায়নের ন্যায়ভাষ্য গৌতমসূত্রের সর্বপ্রাচীন ব্যাখ্যাগ্রন্থ। অবিদ্ধকৰ্ণ, ভাবিবিক্ত, অধ্যয়ন, ত্রিলােচন প্রভৃতির ন্যায়ভাষ্যব্যাখ্যা কালক্রমে লুপ্ত হইয়াছে এবং উদ্দ্যোতকরের ন্যায়ভাষ্যবার্তিক, বাচস্পতিমিশ্রের তাৎপর্যটীকা ও উদয়নাচার্যের তাৎপর্যপরিশুদ্ধি প্রসিদ্ধি লাভ করিয়াছে। প্রৌঢ়গৌড়নৈয়ায়িকসানাতনির ন্যায়সূত্রব্যাখ্যা উদয়ন এবং শংকরমিশ্র কর্তৃক উল্লেখিত হইয়াছে। বল্লালসেনের রাজত্বকালে কোনও বাঙালী পণ্ডিত একখানি ন্যায়সূত্ৰবৃত্তি রচনা করিয়াছিলেন বলিয়া জানা যায়। পরবর্তী যুগেও ন্যায়সূত্রের উপর নানা ব্যাখ্যাগ্রন্থ রচিত হইয়াছে। তন্মধ্যে মৈথিল কেশবমিশ্রের গৌতমীয়সূত্রপ্রকাশ, দাক্ষিণাত্য ভট্টবাগীশ্বরের ন্যায়সূত্রতাৎপর্যদীপিকা। এবং বঙ্গীয় বিশ্বনাথ ন্যায়পঞ্চাননের ন্যায়সূত্ৰবৃত্তি ও রাধামােহন গোস্বামীর ন্যায়সূত্ৰবিবরণ সমধিক উল্লেখযােগ্য। বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষং প্রকাশিত মহামহােপাধ্যায় ফণিভূষণ তর্কবাগীশ -কৃত ন্যায়দর্শনের বিস্তৃত বঙ্গানুবাদ ও ব্যাখ্যা দ্বার। বর্তমান যুগে প্রাচীন ন্যায়শাস্ত্র সুগম হইয়াছে। উদ্দ্যোতকরের পরে কাশ্মীরে এবং উদয়নাচার্যের পরে বিদেহ-বঙ্গে মধ্য ও নব্য ন্যায় প্রস্থান উদ্ভূত হয়। সামান্যতঃ অক্ষপাদ মতানুযায়ী হইলেও ইহাতে বহুস্থলে। নৃতন মত গ্রহণ ও প্রাচীন মত বর্জন করা হইয়াছে।

অনন্তলাল ঠাকুর।

অক্ষমালা রুদ্রাক্ষের মালা ( অক্ষাণাং মালা)। অক্ষমালা জপমালা বিশেষ। শৈব ও শাক্তগণ এই মালা কণ্ঠে ও বাহুতে ধারণ করিয়া থাকেন। রুদ্রাক্ষের মালা না হইলেও প্রার্থনা ও জপের জন্য অন্যান্য ধর্মেও জপমালা ( rosary) ব্যবহারের রীতি প্রচলিত আছে।


অক্ষমালা তন্ত্রমতে ‘অ’-কার হইতে ‘ক্ষ’-কার পর্যন্ত ৫০টি বর্ণমালাকে অক্ষমালা বলে।

অক্ষমালা শূদ্রকন্যা অক্ষমালা বশিষ্ঠের অন্যতমা পত্নী ছিলেন। মহর্ষি বশিষ্ঠের সংসর্গে তিনি অসামান্য গুণবতী। হইয়াছিলেন। (মনুসংহিতা, ৯২৩)।

তারাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য।

অক্ষয়কুমার দত্ত (১৮২০-১৮৮৬ খ্ৰী) উনবিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগে নিরবচ্ছিন্ন বৈজ্ঞানিক যুক্তিবাদের অনুপ্রেরণায় যে সকল মনীষী বাংলা গদ্যসাহিত্য ও ব্রাহ্ম আন্দোলনের ইতিহাসে স্বীয় প্রতিভার বিশিষ্ট স্বাক্ষর রাখিয়া যাইতে সমর্থ হইয়াছেন, অক্ষয়কুমার দত্ত নিঃসন্দেহে তাহাদের মধ্যে প্রধান। তাঁহার জন্মস্থান নবদ্বীপের নিকটবর্তী চুপী গ্রাম। উনবিংশ বর্ষ বয়ঃক্রম কালে পিতৃবিয়ােগের ফলে প্রতিকূল সাংসারিক অবস্থার সৃষ্টি হওয়ায় অক্ষয়কুমার বিদ্যালয় পরিত্যাগ করিয়া বিষয়কর্মের চেষ্টা করিতে বাধ্য হন। কিন্তু পরবর্তী জীবনে তাহার শিক্ষাভিলাষ ও জ্ঞানস্পৃহা কখনও হ্রাস পায় নাই। ন্যূনাধিক চতুর্দশ বৎসর বয়সে তিনি ‘অনঙ্গমােহন’ নামে একখানি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন। যৌবনের প্রারম্ভে সংবাদ-প্রভাকর’-সম্পাদক কবি ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের সহিত তাহার পরিচয় ঘটে। গুপ্তকবির অনুরােধে ‘সংবাদ-প্রভাকর'-এর জন্য তিনি 'ইংলিশম্যান’ নামক ইংরেজী পত্রিকা হইতে কিছু কিছু অনুবাদ করিতে আরম্ভ করেন। এই সূত্রে তাঁহার গদ্যরচনার সূচনা হয়

এবং অচিরেই তিনি সংবাদ-প্রভাকর’-এর একজন বিশিষ্ট লেখকরূপে খ্যাতি লাভ করেন। ১৮৩৯ খ্রীষ্টাব্দের ২৫ ডিসেম্বর ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্তের প্রস্তাবে তিনি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রতিষ্ঠিত তত্ত্ববােধিনী সভার সভ্য মনােনীত হন এবং কিছুকাল ইহার সহকারী সম্পাদকের কার্য করেন। ১৮৪০ খ্রী ১৩ জুন কলিকাতায় দেবেন্দ্রনাথ কর্তৃক তত্ত্ববােধিনী-পাঠশালা স্থাপিত হইলে অক্ষয়কুমার ইহার শিক্ষক নিযুক্ত হন; এবং তত্ত্ববােধিনী সভা হইতে তাহার প্রণীত বালপাঠ্য একটি বাংলা ‘ভূগােল’ প্রকাশিত হয় ( ১৮৪১ খ্রী)। ১৮৪৩ খ্রী ৩০ এপ্রিল পাঠশালাটি হুগলী জেলার অন্তর্গত বাঁশবেড়িয়াতে স্থানান্তরিত হইলে তাহার পক্ষে কলিকাতা ত্যাগ করিয়া তথায় যাওয়া সম্ভব হয় নাই। পাঠশালায় শিক্ষকতাকালে ১৮ ৪ ২ খ্ৰীষ্টাব্দের জুন মাসে প্রসন্নকুমার ঘােষের সহযােগিতায় তিনি বিদ্যাদর্শন’ নামে এক মাসিক পত্র প্রকাশ করেন। মাত্র ছয়টি সংখ্যা প্রকাশিত হইবার পর উহা বন্ধ হইয়া যায়। কলিকাতা ব্রাহ্মসমাজের ও তত্ত্ববােধিনী সভার মুখপত্র ‘তত্ত্ববােধিনী পত্রিকার সম্পাদক নির্বাচনের জন্য দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক গৃহীত এক প্রতিযােগিতা-পরীক্ষায় তাহার একটি প্রবন্ধ সর্বোৎকৃষ্ট বিবেচিত হওয়াতে তিনি মাসিক ৩০, বেতনে উক্ত পত্রিকার সম্পাদকপদে নিযুক্ত হন। ১৮৪৩ খ্র ১৬ আগস্ট তাঁহার সম্পাদকতায় ‘তত্ত্ববােধিনী পত্রিকার প্রথম সংখ্যা আত্মপ্রকাশ করে। ১৮৪৩ হইতে ১৮৫৫ খ্রী পর্যন্ত তিনি অত্যন্ত যােগ্যতার সহিত এই পত্রিকার