পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
অগ্নি
অগ্নিপুরাণ

ঐতরেয় ব্রাহ্মণের এক স্থলে অগ্নিকে ‘দিব্য’ ও ‘অপমৎ’ এই বিশেষণদ্বয়ের দ্বারাও বিশেষিত করা হইয়াছে। বৈদিক মন্ত্রসমূহে অরণি-দ্বয়ের সংঘর্ষণ হইতে যজ্ঞিয় অগ্নির উৎপত্তি প্রায়শঃই বর্ণিত হইয়াছে-‘উত স্ম যং শিশুং যথা নবং জনিষ্ঠ অরণী’ ( ঋ ৫. ৯৩)। ঋগবেদীয় মন্ত্রসমূহে অগ্নির সহিত ‘ত্রিত্ব’ সংখ্যার সম্বন্ধ বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি ‘ত্রিষধস্থ,’ ‘ত্রিপস্ত্য'; ‘গার্হপত্য, ‘আহবনীয়’ ও ‘দক্ষিণ’ রূপে তাহার রূপত্ৰয়ও সুবিদিত। ‘হব্য-বাহন’, ‘ক্রব্য-বাহন’ ও ‘আমা’ রূপে তাঁহার ত্রিবিধ রূপও যজুর্বেদে দৃষ্ট হয়। | ঋগবেদে ‘দৈববাদাস’, ‘াসদস্যব’, ‘বাধশ্ব’ প্রভৃতি রূপে অগ্নির বিশেষণও দৃষ্ট হয়। ইহা হইতে অনুমিত হয়। যে প্রাচীন ব্রাহ্মণ ও রাজন্যগণ কর্তৃক অগ্নির উপাসনা বিশেষভাবে প্রচলিত ছিল। ঋগবেদে প্রধানতঃ রক্ষক ও পুত্র, পশু, হিরণ্য প্রভৃতির দাতা রূপে অগ্নির আবাহন লক্ষিত হয়। তিনি বিপতি', তিনি ‘রক্ষোহ। অগ্নি এই শব্দটির সহিত ইন্দো-ইওরােপীয় ভাষাগােষ্ঠীর অন্তভূত ল্যাটিন ও স্লাভনিক ভাষায় প্রচলিত যথাক্রমে ignis এবং ogni শব্দদ্বয়ের সাদৃশ্য লক্ষণীয়। ইন্দো-ইরানীয় আর্যগণের মধ্যে অগ্নিপূজার সবিশেষ প্রচলন সুবিদিত। ‘বৈশ্বানর’, ‘তনপাং’, ‘নরাশংস প্রভৃতি রূপেও ঋগবেদে অগ্নির আবাহন দৃষ্ট হইয়া থাকে। ū A. A. Macdonell, Vedic Mythology, Strassburg, 1897; J. Muir, Original Sanskrit Texts, vol. V. 3rd Edn. London, 1884; M. Bloomfield, Rig Veda Repititions, Part 2, Harvard Oriental Series, vol. XXIV, 1916.

বিষ্ণুপদ ভট্টাচার্য

অগ্নি বহু ধর্মীয় অনুষ্ঠানের সহিত অগ্নির সম্পর্ক অচ্ছেদ্য। অগ্নির পবিত্রতা সর্ব ধর্মে স্বীকৃত। প্রাচীন কালে বহু স্থানে অগ্নিপূজা প্রচলিত ছিল। বর্তমানে ভারতবর্ষীয় জরথুস্ত্রবাদী পাৰ্শী সম্প্রদায় অগ্নিপূজক। পুরাণের মতে ধর্মের ঔরসে বসুভার্যার গর্ভে তাঁহার জন্ম। মতান্তরে তিনি ব্রহ্মার মুখ হইতে উৎপন্ন। অগ্নির ভার্যা স্বাহা। ‘অগ্নিপূজা’ দ্র।

সুধাংশুপ্রকাশ চৌধুরী

অগ্নিকুল পৃথ্বীরাজ রাসস এবং অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত রাজপুতদের উৎপত্তি সম্বন্ধে প্রচলিত কাহিনী অনুসারেবিশ্বামিত্র, গৌতম, অগস্ত্য প্রভৃতি ঋষিগণ দক্ষিণ রাজপুতানার আবু পর্বতে এক যজ্ঞের আয়ােজন করেন কিন্তু দৈত্যদের অত্যাচারে যজ্ঞের বিঘ্ন ঘটে। তখন বশিষ্ঠ | মন্ত্রবলে যজ্ঞাগ্নি হইতে পরমার, চৌলুক্য, পরিহার ( প্রতিহার) এবং চাহমান—এই চারজন বীরপুরুষ সৃষ্টি করেন। ইহারা দৈত্যদের নিধন করিলে যজ্ঞ সুসম্পন্ন হয়। এই চারজন বীরপুরুষ হইতে যথাক্রমে পরমার, | চৌলুক্য, প্রতিহার ও চাহমান (চৌহান) রাজপুত | বংশের সৃষ্টি হয়। অগ্নি হইতে জন্ম এই কারণে এই রাজপুত বংশ গুলি ‘অগ্নিকুল রাজপুত’ নামে খ্যাত। | কাহিনীর ঈষৎ ভিন্নরূপও প্রচলিত আছে। আধুনিক ঐতিহাসিকগণ এই কাহিনী অমূলক মনে করেন। দ্র চান্দ বরদাই, পৃথ্বীরাজ রাসসা, ১ম ভাগ, কাশী, ১৯০৪ খ্রী।

নিমাইসাধন বসু

অগ্নিপরীক্ষা রাজদ্বারে অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধনির্ণয়ার্থ প্রাচীন পরীক্ষাবিশেষ। ধান্য দ্বারা ঘর্ষণ ও জলে প্ৰক্ষালিত করিয়া অভিযুক্তের অঞ্জলিবদ্ধ হস্তদ্বয়ে সাতটি অশ্বত্থাপত্র স্থাপন এবং সাতগাছি সূত্র দ্বারা সেই সপ্ত পত্ৰ বেষ্টন করা হইত। পরে পঞ্চাশ পল অর্থাৎ ৩ তােলা, ২ মাযা, আট রতি পরিমিত, ৮ অঙ্গুলি দীর্ঘ অগ্নিতুল্যবর্ণ তপ্ত লৌহপিণ্ড অভিযুক্তের অঞ্জলিবদ্ধ করদ্বয়ে অর্পিত হইলে যােল অঙ্গুলি দীর্ঘ ৭টি মণ্ডল তাহাকে অতিক্রম করিতে হইত এবং অষ্টম মণ্ডলে দাড়াইয়া, নবম মণ্ডলে তাহা পরিত্যাগ করিতে হইত। ইহাতে হস্ত | দগ্ধ হইলে অপরাধী; অন্যথায় নিরপরাধ জ্ঞান করা হইত। অষ্টম মণ্ডলের কোনও এক মণ্ডলের মধ্যে তপ্ত | লৌহপিণ্ড পড়িলে পুনরায় পরীক্ষা হইত। ( যাজ্ঞবল্ক্যসংহিতা, ২য় অধ্যায়)।

তারাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য

অগ্নিপুর মাহিষ্মতী দ্র

অগ্নিপুরাণ পুরাণ ও পুরাণেতর নানা বিষয়ের আলােচনাত্মক পুরাণগুলির অন্যতম। ইহা মূলতঃ অগ্নিবশিষ্ঠ| সংবাদরূপে নিবদ্ধ। ইহাতে বিষ্ণু, লিঙ্গ, দুর্গা, গণেশ, সুর্য | প্রভৃতি বিভিন্ন দেবতার পূজা, তান্ত্রিক অনুষ্ঠান, দেবতার মূর্তিনির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা, বিবাহানুষ্ঠান, অন্ত্যেষ্টিপদ্ধতি প্রভৃতির কথা ছাড়া মৃত্যু ও জন্মান্তরবাদ, সৃষ্টিতত্ত্ব, ভূগােল, বংশানুকীর্তন প্রভৃতি বিশুদ্ধ পৌরাণিক বিষয়ের বিবরণ আছে। আলােচিত অন্যান্য বিবিধ বিষয়ের মধ্যে জ্যোতিষ, | শাকুনবিদ্যা, গৃহনির্মাণ, রাজনীতি, যুদ্ধবিদ্যা, চিকিৎসা, | ছন্দ, কাব্য, ব্যাকরণ, কোষ প্রভৃতি উল্লেখযােগ্য। কেহ

১০