পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অঙ্গ অঙ্গ’ বিহারের ভাগলপুর ও মুঙ্গের জেলা লইয়া প্রাচীন অঙ্গরাজ্য গঠিত হইয়াছিল। খ্ৰীষ্টপূর্ব পঞ্চম-ষষ্ঠ শতকের ঘােড়শ মহাজনপদের ইহা অন্যতম। গৌতম বুদ্ধের গৃহত্যাগের সময়ে দেখা যায় যে অঙ্গরাজ্য মগধের অন্তভুক্ত এবং বিম্বিসার অঙ্গ-মগধের রাজা। অজাতশত্রু যুবরাজ অবস্থায় অঙ্গের শাসনকর্তা ছিলেন। ঋগবেদে অঙ্গের উল্লেখ নাই বটে, কিন্তু অথর্ববেদে অঙ্গবাসীদের ব্রাত্য জাতি বলিয়া অভিহিত করা হইয়াছে। তাহাদের বসতি ছিল শােণ ও গঙ্গার অববাহিকায়। পাণিনিও অঙ্গ দেশকে বঙ্গ, কলিঙ্গ ও পুণ্ডের সহিত মধ্যদেশের অন্তভুক্ত বলিয়া বর্ণনা করিয়াছেন। মহাভারতে। আছে যে বলিরাজের মহিষী সুদেষ্ণার গর্ভজাত ঋষি দীর্ঘতমসের বংশধরগণ অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ প্রভৃতি অঞ্চলে বাস করিতেন। আধুনিক নৃতাত্ত্বিকগণও অনুমান করেন যে অঙ্গ ও কলিঙ্গের মধ্যে জাতিগত সাদৃশ্য আছে। অঙ্গরাজ্যের নামকরণ সম্বন্ধে বিভিন্ন কাহিনী প্রচলিত। মহাভারতের আদিপর্বে আছে যে রাজা অঙ্গের নামানুসারেই। রাজ্যের নামকরণ হয়। কিন্তু রামায়ণে আছে যে কামদেব বা মদন শিবের কোপে এইস্থানেই অঙ্গ পরিত্যাগ করিয়া অনঙ্গ হন বলিয়াই দেশের এই নাম। অঙ্গরাজ্যের বহুল উল্লেখ রামায়ণ ও মহাভারতে। আছে। রাজা দশরথের অন্তরঙ্গ মিত্র অঙ্গরাজ রােমপাদ বা লােমপদ ঋষ্যশৃঙ্গ মুনির সাহায্যে যজ্ঞানুষ্ঠান করেন ও নিজকন্যা শান্তার সহিত মুনির বিবাহ দেন। দুর্যোধন কর্তৃক কর্ণকে অঙ্গরাজ্যে অভিষিক্ত করার আখ্যান সর্বজনবিদিত। চম্পা (চম্পাপুরী, চম্পানগরী) ছিল অঙ্গ দেশের রাজধানী। এখনও ভাগলপুরের সন্নিকটে ইহার অস্তিত্ব আছে। মহাভারতে ও বিভিন্ন পুরাণে ইহার প্রাচীন নাম মালিনী বা মালিন। গৌতম বুদ্ধ ও মহাবীরের জীবনের একাধিক ঘটনার সহিত সংশ্লিষ্ট হওয়ায় চম্পা উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই পুণ্যতীর্থস্থান। প্রাচীন ভারতের শিল্পসমৃদ্ধ নগরীর অন্যতম চম্পা একটি বাণিজ্যকেন্দ্ররূপেও প্রখ্যাত হয়। চীনা পরিব্রাজক ফা-হিয়েন পঞ্চম শতাব্দীতে ও সপ্তম শতাব্দীতে ভারতভ্রমণকালে চম্পা বা চা-পােতে আসিয়াছিলেন। শিশিরকুমার মিত্র অঙ্গ জৈন আগমশাস্ত্রের অংশ। জৈনদের প্রধান ধর্মসাহিত্যকে আগমশাস্ত্র বলে। এই আগমশাস্ত্র সংখ্যায় পয়তাল্লিশখানি ( ‘দৃষ্টিবাদ’ বাদে)। কিন্তু অঙ্গগ্রন্থের

________________

অদ সংখ্যা একাদশ, দৃষ্টিবাদসহ দ্বাদশ। এই দ্বাদশাগ্রস্থ জৈন ধর্মের মূল ভিত্তি। ইহা ছাড়া, আবার দ্বাদশ উপাঙ্গগ্রন্থও আছে। বর্তমানে যে অঙ্গশাস্ত্র প্রচলিত আছে, তাহা মহাবীরের পঞ্চম গণধর সুধর্মস্বামী কর্তৃক প্রচারিত হইয়াছে। কথিত আছে, সাধুগণ এই দ্বাদশাঙ্গ কণ্ঠস্থ করিয়া রাখিতেন। মহাবীরের নির্বাণ লাভের পর ১৬০ বৎসর পর্যন্ত এই দ্বাদশাঙ্গ লােকের মুখে মুখেই প্রচারিত হইয়াছিল। অতঃপর উহা লিপিবদ্ধ হয়। দৃষ্টিবাদের অন্তর্গত চতুর্দশ পূর্বশাস্ত্রও এই অঙ্গগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। অঙ্গগ্রন্থের মূল বক্তব্য এই যে, প্রতি সৎপদার্থের মধ্যে প্রতিক্ষণেই যুগপৎ উৎপত্তি, বিনাশ ও স্থিতির কার্য চলিতেছে ( ‘উপ্পণেই বা বিগমেই বা ধুবেই বা )। এই ত্রিপদীবাক্যই জৈনদর্শনের মূল কথা এবং ইহাই জৈনদর্শনে পরিণামবাদ। এই মূল তত্ত্ব দ্বাদশাগ্রন্থে নানাভাবে রূপায়িত হইয়াছে। এই সমস্ত অঙ্গগ্রন্থের নামের জন্য ‘প্রাকৃতসাহিত্য দ্রষ্টব্য।। M. Winternitz, History of Indian Literature, vol. II, Calcutta, 1931. | সত্যরঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায় অঙ্গদ বিখ্যাত শিখ গুরু। গুরু নানক মৃত্যুর (১৫৩৮ খ্রী) পূর্বে দুই পুত্রের দাবি অগ্রাহ্য করিয়া অন্যতম প্রিয় | শিষ্য অঙ্গদকে স্বীয় উত্তরাধিকারী মনােনীত করিয়া যান। অঙ্গদ শিখদিগকে এক স্বতন্ত্র সম্প্রদায়রূপে সংগঠিত করেন। কেহ কেহ বলেন তিনিই গুরুমুখী লিপির প্রবর্তন করেন। ১৫৫২ খ্রীষ্টাব্দে তাহার মৃত্যু হয়।

সৌরীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য অঙ্গদ কিষ্কিন্ধ্যাপতি বানররাজ বালির পুত্র। মাতার নাম তারা। রাম কর্তৃক বালি নিহত হইলে সুগ্রীব রাজ্যলাভ করেন এবং অঙ্গদ যুবরাজ পদে অভিষিক্ত হন। বানর-সেনাবাহিনীর অধিনায়ক হইয়া তিনি সীতা উদ্ধারের সাহায্যকল্পে রামের পক্ষে লঙ্কায় গমন করেন এবং সম্পাতির নিকট হইতে সীতার সন্ধান আনিয়া দেন। রাবণের সহিত রামের যুদ্ধের আয়ােজন হইলে যুদ্ধ এড়াইবার উদ্দেশ্যে রাম অঙ্গদকে রাবণের নিকট দূতরূপে প্রেরণ করেন। রামের নির্দেশে অঙ্গদ রাবণকে সীতা প্রত্যর্পণ করিয়া রামের শরণাপন্ন হইতে বলেন। এই প্রসঙ্গে অঙ্গদ রাবণকে বিদ্রুপবাণে বিদ্ধ করেন। ‘অঙ্গদের রায়বার’ নামে প্রসিদ্ধ বাংলা রামায়ণের এই অংশ বাঙালীর বিশেষ প্রিয় বস্তু। সুগ্রীবের মৃত্যুর পর অঙ্গদ কিষ্কিন্ধ্যার রাজা

১৫