পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অঙ্গরাগ অঙ্গরাগ বিভিন্ন উপচারের সংমিশ্রণে দেহের বিভিন্ন অঙ্গ সুরভিত বা কান্তিময় করিবার উদ্দেশ্যে যে অভ্যঞ্জন বা অঙ্গলেপ প্রস্তুত হয় তাহাকে অঙ্গরাগ (cosmetic)। বলে। সকল দেশে সকল কালে নরনারী অল্পবিস্তর অঙ্গরাগ ব্যবহার করিয়া আসিয়াছে। প্রাচীন মিশরে প্রথম রাজবংশের শাসনকালে ( ৪০০০ খ্রীষ্টপূর্ব ) এবং ভারতবর্ষের সিন্ধু সভ্যতার যুগে বিবিধ অঙ্গরাগের ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গিয়াছে। মহেপ্পো-দড়ো ও হরপ্পার প্রত্নতাত্ত্বিক খননের ফলে অঞ্জন অঞ্জনশলাকা অধররঞ্জনবর্তী। ( lipstick) কপােল-রক্তপিষ্টিকা (rouge paste ) বর্তলৌহের (bronze) মুকুর, হস্তিদন্তের চিরুনি প্রসাধনপটু ইত্যাদি প্রসাধন সংক্রান্ত বহুবিধ উপকরণ আবিষ্কৃত হইয়াছে। বৈদিক সাহিত্য রামায়ণ মহাভারত ও পুরাণাদিতে বিবিধ অঙ্গরাগ ব্যবহারের উল্লেখ আছে। প্রাচীন ভারতে চতুঃষষ্টি কলার মধ্যে ‘দশনবসনাঙ্গরাগ’ একটি কলা হিসাবে গণ্য হইত। দশনবসন’ অর্থাৎ অধরােষ্ঠ এবং ‘অঙ্গ’ অর্থাৎ দেহ উভয়ের সৌন্দর্য সম্পাদনই এই কলার উদ্দেশ্য। কামসূত্র’ ‘রতিরহস্য’ ‘অনঙ্গরঙ্গ’ ‘নাগরসর্বস্ব’ ‘পঞ্চসায়ক’ প্রভৃতি গ্রন্থে অঙ্গরাগের নানাবিধ প্রস্তুত প্রণালী ও ব্যবহারবিধি লিপিবদ্ধ আছে। সংস্কৃত ও প্রাকৃত কাব্যসমূহেও অঙ্গরাগ ব্যবহারের বহুল বর্ণনা কামসূত্রের নাগরকবৃত্ত প্রকরণে লিখিত হইয়াছে— নাগরক প্রভাতে শয্যা ত্যাগ করিয়া নিয়তকৃত্য সমাপনান্তে দণ্ডধারণপূর্বক সামান্য অনুলেপনাদি ধূপ ও মাল্য গ্রহণ করিয়া মুখ সিথ (মােম) ও অলক্ত রঞ্জিত করিয়া আদর্শে মুখ দেখিবে এবং মুখবাস ও তাম্বল গ্রহণপূর্বক নিজকার্যে নিযুক্ত হইবে। সে প্রতিদিন স্নান করিবে, একদিন অন্তর অঙ্গে তৈলাদি মর্দন করিবে, দুইদিন অন্তর ফেনক ( সাবান ) সাহায্যে গাত্র পরিষ্কৃত করিবে, তিনদিন অন্তর ক্ষৌরকার্য করিবে ও নখ কাটিবে। সর্বদা সংবৃত কাদির ঘর্ম ‘কর্পট’ অর্থাৎ রুমালদ্বারা মুছিয়া ফেলিবে। ঈশ্বরকৃত ‘গন্ধযুক্তি ও শাঙ্গ ধরকৃত ‘গন্ধদীপিকা’ গ্রন্থে অঙ্গরাগাদি বিষয়ে বিশেষভাবে আলােচনা করা হইয়াছে। বৃহৎসংহিতা’-র গন্ধযুক্তি প্রকরণেও নানা প্রকার অঙ্গরাগের আলােচনা আছে। প্রাচীন কামশাস্ত্রকার ও চিকিৎসকগণ দেহ-দুর্গন্ধনাশক এবং ঘর্মনিবারক নানাবিধ অঙ্গরাগ প্রস্তুত করিবার ব্যবস্থা দিয়াছেন। গাত্র ও বিশেষ করিয়া মুখের ত্বক মসৃণ কোমল ও কান্তিযুক্ত করিবার জন্য অঙ্গরাগ প্রস্তুত হইত। দেহ সুরভিত করিবার জন্য অঙ্গলেপন ও নানাবিধ তৈলাদি এবং কেশপতন নিবারণের জন্যও

________________

অঙ্গিরা নানাপ্রকার ঔষধ বা অনুলেপন প্রস্তুত হইত। দন্তধাবনের জন্য নানা প্রকার মঞ্জন ইত্যাদির ব্যবস্থা ছিল। অবাঞ্ছিত লােমনাশের বহুবিধ প্রয়ােগ প্রচলিত ছিল। বিভিন্ন প্রকারের অঙ্গরাগ প্রস্তুতির নানাবিধ ব্যবস্থার উল্লেখ পূর্বোদ্ধত গ্রন্থাদিতে পাওয়া যায়। আধুনিককালের ‘ফেস পাউডারের ন্যায় প্রাচীনকালে লােধচূর্ণ চন্দনচূর্ণ ও কুঙ্কুমচুৰ্ণাদি ব্যবহৃত হইত। অধরে ও কপােল রক্তরাগ প্রস্ফুটিত করিবার জন্য লিপষ্টিক ও রুজের ন্যায় অলক্তক ও মঞ্জিষ্ঠার ব্যবহার হইত। তাম্বলরাগে | ওষ্ঠাধর রঞ্জিত করা নিত্যকর্ম ছিল। নয়নের শ্রীবর্ধনের জন্য কজ্জল ও বিবিধ প্রকারের অঞ্জন ব্যবহৃত হইত। শীতের প্রকোপ হইতে রক্ষা ও কোমল রাখিবার জন্য অধরােষ্ঠ ও গণ্ডে মােম ব্যবহার করা হইত। দেহ কুঙ্কুমচুর্ণে ও নখ কুরুবকপুষ্পরগে রঞ্জিত করা হইত। বর্তমান যুগে পৃথিবীর প্রায় সকল সভ্য দেশে অঙ্গরাগের ব্যবহার বৃদ্ধি পাইতেছে এবং সে কারণে প্রত্যেক দেশে অঙ্গরাগ প্রস্তুতি একটি বিরাট শিল্পে পরিণত হইয়াছে। এমন কি যে দেশ যে পরিমাণে সাবান প্রস্তুত ও ব্যবহার করিয়া থাকে সে দেশকে সেই অনুপাতে সভ্য হিসাবে গণ্য করা হয়। ভারতবর্ষে অঙ্গরাগ শিল্পের উংপাদনপরিমাণ এইরূপ | ফেসক্রীম ও স্নো ফেস পাউডার টয়লেট পাউডার | টুথ পেস্ট | টুথ পাউডার ১৯৬০ উৎপাদন-পরিমাণ কিলােগ্রাম ৭৬৬১০২ ৪১৩৫ ৩২ ২৬৪৩৭৬২ ১৮২০ ৭৬২ ২৬১১২৫ ১৯৬১ উৎপাদন-পরিমাণ কিলোগ্রাম ৭১৮৩৪৭ ২৩৬৭৪ ৩ ২৫ ৪৬২২১ ১৮৪ ০ ০৬৭ ত্রিদিবনাথ রায় | অজামী নাগা নাগা দ্র

অঙ্গিরা প্রাচীন ঋষি অঙ্গিরা ব্রহ্মার মানসপুত্রগণের অন্যতম বলিয়া পরিগণিত হইয়া থাকেন। তিনি মূল | গােত্রপ্রবর্তকদিগের মধ্যে একজন। অঙ্গিরা ও তদ্বংশীয়গণ ঋগবেদের ঋষি হইলেও অথর্ববেদের মন্ত্র সংকলনে তাহাদের কৃতকর্ম ও খ্যাতি অধিক। অথর্ববেদের এক নাম আঙ্গিস বেদ। মুণ্ডকোপনিষদে কথিত আছে যে, অঙ্গিরা

১৬