পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অঙ্গুত্তর নিকায় অথর্বর কাছে ব্রহ্মবিদ্যা লাভ করিয়াছিলেন। অথর্ববেদের যাতু, অভিচার প্রভৃতি ঘাের কর্মের মন্ত্র গুলি আঙ্গিরস মন্ত্র নামে খ্যাত। অথর্ববেদীয় কল্পগ্রন্থের মধ্যে আভিচারিক কল্পের নাম আঙ্গিরসকল্প। অথর্বা’ ও ‘অথর্ববেদ’ দ্র। দুর্গমােহন ভট্টাচার্য অঙ্গুত্তর নিকায় সুপিটকের চতুর্থ নিকায়-কে অঙ্গুত্তর। নিকায় বলা হয়। রাজগৃহের প্রথম বৌদ্ধ-মহাসংগীতির সময় অনুরুদ্ধ এই নিকায়ের ভার গ্রহণ করেন। কখনও কখনও ‘একুত্তর নিকায়’ নামেও ইহাকে অভিহিত করা। হয়। ইহার সুত্তগুলি প্রথমতঃ ১১টি পরিচ্ছেদে (নিপাত) বিভক্ত এবং প্রত্যেক পরিচ্ছেদে আবার কতক গুলি বঙ্গ (বর্গ ) আছে। প্রত্যেক নিপাতে সুত্ত গুলি এমন ভাবে সন্নিবিষ্ট হইয়াছে যাহাতে একই নিপাতের অন্তর্ভুক্ত সুত্ত গুলির আলােচ্য বিষয়ের সংখ্যার সমতা থাকে। যেমন, প্রথম নিপাতে সেই সব বিষয় রহিয়াছে যাহাদের সংখ্যা ‘এক’; এই নিপাতে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক সম্বন্ধে আলােচনা রহিয়াছে। এইরূপে দ্বিতীয় নিপাতের বিষয়বস্তুগুলির সংখ্যা হইল ‘দুই’; তৃতীয় নিপাতের ‘তিন ইত্যাদি। দীঘ ও মজঝিম নিকায়ের বৃহদাকার সুত্তগুলিতে উপস্থাপিত বৌদ্ধধর্মের তত্ত্ব (doctrine) এই নিকায়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারের সুত্ত সাহায্যে অতি সুন্দরভাবে আলােচিত হইয়াছে। অভিধম্ম পিটকের অন্যতম গ্রন্থ পুগ্গল পঞত্তি বস্তুতঃ এই নিকায় হইতে সংগৃহীত উদ্ধতির সাহায্যেই সংকলিত হইয়াছে। বিশ্বনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় অঙ্গুলি ছাপ মানুষের আঙুল, করতল ও পদতল -এর ত্বকের উপর অনেক সূক্ষ্ম রেখা দেখা যায়। ইংরেজীতে এগুলিকে রিজ (ridge) বলে। এই রেখাগুলি হাতের তথাকথিত সামুদ্রিক রেখা হইতে বিভিন্ন। এই সকল সূক্ষ্ম রেখ নানা ভাবে বিন্যস্ত থাকে। বৈজ্ঞানিকেরা মােটামুটি ইহার তিনটি প্রকারভেদ বর্ণনা করিয়াছেন- হাের্ল, লুপ এবং আর্চ (whorl, loop, arch)। প্রাচীন হিন্দুরা শঙ্খ, জবা, পদ্ম, সীপ প্রভৃতি বিভাগে এই সকল রেখাবিন্যাসকে বর্ণনা করিতেন। প্রথমে যজুর্বেদে এই টিপদাগের বৈশিষ্ট্যের উল্লেখ দেখা। যায়। ইহাতে মানবের অবয়বের বিভিন্ন চিহ্ন সম্বন্ধে আলােচনায় বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠের টিপে অঙ্কিত চক্রের উপর বিশেষ ভা ১৩

________________

অঙ্গুলি ছাপ প্রাধান্য দেওয়া হইয়াছে। অন্যান্য অঙ্গুলির টিপে অঙ্কিত শঙ্খ, সীপ ও জবা সম্বন্ধেও বিস্তারিতভাবে বলা হইয়াছে। বিষ্ণুপূজা সম্পকীয় নারায়ণ অষ্টক’ গ্রন্থে পদ্ম, চক্র, ধনু, অঙ্কুশ, মৎস্য প্রভৃতি টিপের শ্ৰেণীবাচক বহু শব্দ দেখা যায়। পঞ্চাষ্টক’ গ্রন্থের প্রথম অধ্যায়ে ১৩ সংখ্যক শ্লোকে দন্ত, অঙ্কুশ, চাপ, কুলিশ, বজ, শ্রীবাস্তব, মৎস্য প্রভৃতি উপশ্রেণীবাচক শব্দও আছে। চীন দেশে অনুরূপ দুইটি শ্রেণীর নাম পাওয়া যায়- লে। (Lo) এবং কী (Ki)। ইংলণ্ডে ১৬৮৪ খ্রী, ইটালীতে ১৬৮৬ খ্ৰী, জার্মানীতে ১৭৫১ ও ১৭৬৪ খ্ৰীষ্টাব্দে আঙুলের ছাপের সম্বন্ধে বৈজ্ঞানিক উপায়ে আলােচনার সূত্রপাত হয়। | আঙুল বা ত্বকের ছাপের সম্বন্ধে ইহা বলা চলে- এক ব্যক্তির হাতের বা পায়ের ত্বকের চিহ্ন কখনও অন্য কোনও ব্যক্তির ছাপের সহিত হুবহু মিলিয়া যায় না। অর্থাৎ আঙুল বা হাতের ছাপ পাইলে একজন লােককে শনাক্ত করা সম্ভব। বৈজ্ঞানিকেরা আরও বলেন যে এক-একটি জাতির মধ্যে হাের্ল, লুপ এবং আর্চ -এর বিশেষ বিশেষ অনুপাত পাওয়া যায়। সেইজন্য তাহাদের মতে পৃথিবীর দুইটি বিভিন্ন স্থানের অধিবাসীর উক্ত অনুপাত যদি একই প্রকারের হয় তাহা হইলে উভয়ে রক্তসম্পর্কে সম্পর্কিত এরূপ অনুমান করা যাইতে পারে। উনবিংশ শতকের মধ্যভাগে হুগলী জেলার কালেক্টর লক্ষ্য করেন যে বাংলা দেশের গ্রামে জাল সহি নিবারণের জন্য লােকে স্বাক্ষরের পাশে টিপসহি দিয়া থাকে। তিনি তদনুসারে রাজাধর কোনাই নামক জনৈক বাঙালী ঠিকাদারের নিকট দলিলে টিপসহি গ্রহণ করেন। এই দলিলটি আজিও ঐতিহাসিক দলিলরূপে পরিগণিত হয়। হুগলী জেলার আরও দুইজন রাজপুরুষ রামগতি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং উইলিয়াম হাচেল এ বিষয়ে বহু তথ্য সংগ্রহ করেন। সেই তথ্যের উপরে ভিত্তি করিয়া স্যর ফ্র্যাসিস্ গলট ইংলণ্ডে বসিয়া টিপ বা হাতের ছাপের বিজ্ঞান সম্পর্কে গবেষণা করেন।

১৮৯৩ খ্ৰীষ্টাব্দে ভারতবর্ষে ইংরেজ ও ভারতীয় কর্মচারীদের সাহায্যে অপরাধী নির্ণয় ও শনাক্ত করার উদ্দেশ্যে সর্বপ্রথম আঙুলের ছাপ সংগ্রহের জন্য ফিংগার প্রিন্ট বিউরো (Finger-Print Bureau) স্থাপিত হয়। পরবর্তীকালে বিহারের কর্মচারী খানবাহাদুর আজিজউল হক এবং বাংলায় হেমচন্দ্র বসু এই বিজ্ঞানের প্রভূত উন্নতিসাধন করেন। কলিকাতার টিশালাকে আদর্শ করিয়া ইংলণ্ডের স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডে ১৯০১ খ্ৰী ও পরে আরও সমগ্রভাবে ১৯০৫ খ্রীষ্টাব্দে টিশালা স্থাপিত হয়।

১৭