পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

_______________

অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ সমান ; কার্য কারণেরই বিকার ; জগৎ প্রকৃতিরই । পরিণাম। বঙ্গীয় বৈষ্ণবাচার্যগণ বলেন যে, জগৎ পরব্রহ্মের ন্যায় সত্য হইলেও স্বয়ং পরব্রহ্মের পরিণাম নহে; ইহা । তাহার মায়া শক্তির পরিণাম। পরব্রহ্মের বহিরঙ্গা মায়। শক্তিই পরিণতিপ্রাপ্ত হয়। পরব্রহ্ম স্বয়ং অথবা তাঁহার স্বরূপ শক্তি জগদ্রপ পরিণতিপ্রাপ্ত হন না। জগৎ যদিও মায়ারই পরিণতি তথাপি ইহাকে পরব্রহ্মের পরিণাম বলার কারণ এই যে, মায়া পরব্রহ্মেরই শক্তি। শক্তি ও শক্তিমানের অভেদবশতঃ শক্তির পরিণামকে শক্তিমানের পরিণাম বলা হয়। ব্ৰহ্ম মায়ার সাহচর্যে জগদ্রুপে পরিণত হইয়াও স্বীয় অচিন্ত্যশক্তির প্রভাবে স্বয়ং অবিকৃত থাকেন। বিবর্তবাদীগণ পরব্রহ্মের অদ্বয়ত্ব ও অখণ্ডত্ব রক্ষা করিতে গিয়া সৃষ্টিবাচক শ্রুতিবাক্যের পারমার্থিকতা অস্বীকার করিয়াছেন। এহ্মপরিণামবাদগণ পর রহ্মের জগৎকারণত্ববাচক শ্রুতিবাক্যের মর্যাদা রক্ষা করিতে গিয়া ব্রহ্মের অপরিণা মিত্ব। রক্ষা করিতে পারেন নাই। শক্তিপরিণামবাদী বঙ্গীয় বৈষ্ণবাচার্যগণ উভয় প্রকার শ্রুতিরই মর্যাদা রক্ষা। করিয়াছেন। বঙ্গীয় বৈষ্ণবাচাৰ্যদিগের মতে মায়া শক্তির অতিরিক্ত জীব, কাল এবং কর্ম ও বিশ্বসৃষ্টির সহায়ক বলিয়া গণ্য হইয়া থাকে। পরব্রহ্মই প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা। মায়া বা প্রকৃতি তাহারই শক্তিতে তঁহারই সৃষ্টিকার্যে সহায়তা করে। জীবগণ সৃষ্ট বস্তু ভােগ করিবার লােভে দেহাদি অঙ্গীকার করিয়া সৃষ্টিব্যাপারকে সফল করিতে সহায়তা করে। কাল বা সময় প্রকৃতির পরিণতির আনুকুল্য করিয়া থাকে। পরব্রহ্মের শক্তিতেই প্রকৃতির বিকারপ্রাপ্তির যােগ্যতা জন্মে, সন্দেহ নাই; কিন্তু প্রকৃতির মহং-তত্ত্বে পরিণতি, মহৎ-তত্ত্বের অহংকারে পরিণতি, অহংকারের তন্মাত্রাদিতে পরিণতি কালসাপেক্ষ। দুগ্ধ যেমন অম্লযােগে দধিতে পরিণত হওয়ার যােগ্য হইলেও কিছুকাল গত না হইলে দধিতে পরিণত হইতে পারে না, সেইরূপ প্রকৃতি, মহৎ প্রভৃতি তত্ত্বও কালের আনুকুল্য ব্যতীত জগদ্ৰুপে পরিণত হইতে পারে না। পরমেশ্বরকর্তৃক প্রবর্তিত হইয়া জীবের কর্ম বা অদৃষ্ট জীবের কর্মফলভােগের অনুকূলভাবে প্রকৃতিকে পরিণামপ্রাপ্ত করাইয়া থাকে। এইভাবে অদৃষ্টও সৃষ্টি কার্যের আনুকূল্য করিয়া থাকে। | অন্তরঙ্গ স্বরূপ শক্তি এবং বহিরঙ্গা মায়া শক্তি ব্যতীত ভগবানের আর একটি প্রধান শক্তি আছে। সেই শক্তির নাম জীব শক্তি। মনুষ, পশু, পক্ষী, তরু লতা প্রভৃতি। দেহে যে সকল জীবাত্মা আছে তাহার পরব্রহ্মের জীব শক্তিরই অংশ। জীব শক্তি বহিরঙ্গা মায়া শক্তি হইতে উৎকৃষ্ট, কারণ মায়া শক্তি জড়, কিন্তু জীব শক্তি চিপা বা

________________

অচিন্ত্যভেদাভেদবাদ চৈতন্যময়ী। চিদ্রপতত্ত্বের দিক দিয়া জীব শক্তি অন্তরঙ্গ চিচ্ছক্তির সমজাতীয়া হইলেও উহা অন্তরঙ্গা নহে। অন্তরঙ্গাশক্তি ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের স্বরূপে নিত্য অবস্থান করে, কিন্তু ভগবানের স্বরূপের মধ্যে জীব শক্তির স্থিতি নাই। জীব শক্তির স্থান মায়া শক্তির উর্ধ্বে এবং চিচ্ছক্তির নিয়ে। এই শক্তি অন্তরঙ্গ চিচ্ছক্তি ও বহিরঙ্গা মায়া শক্তির মধ্যবর্তিনী। ইহা চিচ্ছক্তির অন্তভুক্ত নহে, ইহা মায়া শক্তির অন্তর্ভুক্তও নহে বলিয়া ইহাকে তটস্থা শক্তি বলা হয়। ভগবানের স্বরূপগত চিচ্ছক্তি কখনও মায়া শক্তির গুণের দ্বারা রঞ্জিত হয় না, কিন্তু জীব শক্তি মায়া শক্তির অন্তর্ভুক্ত না হইলেও মায়ার গুণরাগে রঞ্জিত হইতে পারে। জীব পরব্রহ্মের অংশ। কিন্তু টঙ্কছিন্ন পাষাণখণ্ডকে যে অর্থে অখণ্ড শিলার অংশ বলা হয়, জীবকে সেই অর্থে পরব্রহ্মের অংশ বলা যায় না, যেহেতু ব্ৰহ্ম অচ্ছেদ্য। অংশপদের অর্থ এখানে একদেশ। পরব্রহ্মের অনন্ত শক্তির মধ্যে তাহার জীব শক্তিও একদেশমাত্র। জীব পরব্রহ্মের শক্তি বলিয়াই তাহাকে পরব্রহ্মের অংশ বলা হইয়াছে। শক্তি কখনও শক্তিমান হইতে পৃথক হইয়া থাকিতে পারে | না। কি মায়া শক্তি, কি স্বরূপ শক্তি, কি জীব শক্তি সকল শক্তির সত্তাই পরব্রহ্মের উপর নির্ভরশীল। পরব্রহ্মের সহিত তাহার সকল শক্তির যোেগ এক প্রকার নহে।

অন্তরঙ্গ। চিচ্ছক্তির সহিত তাহার যােগ সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ। | উহা তাঁহার স্বরূপেই অবস্থান করে। তিনি বহিরঙ্গা | মায়া শক্তিরও নিয়ন্তা, মায়া তাহার আশ্রয় না পাইলে থাকিতেই পারে না; সুতরাং মায়া শক্তিও তাহার সহিত যুক্ত। কিন্তু মায়। কখনও তাহাকে স্পর্শ করিতে পারে না। জীব পরব্রহ্মের অংশ হইলেও স্বরূপ শক্তি যুক্ত পরব্রহ্মের অংশ নহে। স্বরূপ শক্তি বিশিষ্ট পরব্রহ্মের অংশের নাম স্বাংশ। চতুবুহ, পরব্যোমস্থ অনন্ত ভগবৎস্বরূপ, পুরুষাবতারগণ, লীলাবতারগণ এবং গুণাবতারাদি স্বাংশের অন্তর্গত। জীবকে মায়া শক্তি যুক্ত পরব্রহ্মের অংশও বলা যায় না, কারণ চেতন পদার্থ জড় পদার্থের অংশ বলিয়া পরিগণিত হইতে পারে না। বস্তুতঃ জীব শক্তি বিশিষ্ট পরব্রহ্মের অংশই জীব। জীব পরব্রহ্মের বিভিন্নাংশ, পরব্রহ্মের স্বরূপের মধ্যে তাহার অবস্থান নাই। ভগবৎস্বরূপসমূহ পরব্রহ্মের বিগ্রহের অন্তর্ভুক্ত। তাহারা শক্তিতে নন বলিয়া তাহাদিগকে পরব্রহ্মের অংশ বলা হইয়া থাকে। পরব্রহ্ম সূর্যমণ্ডলতুল্য এবং জীবগণ সূর্যরশ্মিতুল্য। সূর্যরশ্মি যেমন সূর্যের অংশ হইলেও সর্বদাই সূর্যের বাহিরে অবস্থান করে, সেইরূপ জীবগণও পরব্রহ্মের স্বরূপের বাহিরেই অবস্থান করে। সূর্যরশ্মি যেমন কখনও সূর্য

২৩