পাতা:ভারতকোষ - প্রথম খণ্ড.pdf/৫৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

________________

অজিতকুমার চক্রবর্তী সংস্কৃত ও প্রাদেশিক ভাষায় রচিত বিভিন্ন গ্রন্থ ইহার । জনপ্রিয়তার সাক্ষ্যদান করে। তারাপ্রসন্ন ভট্টাচার্য। অজিতকুমার চক্রবর্তী (১২৯৩-১৩২৫ বঙ্গাব্দ) জন্ম ৪ ভাদ্র ১২৯৩, মৃত্যু ১৪ পৌষ ১৩২৫। পিতা ফরিদপুর জিলার মঠবাড়ি গ্রামের শ্রীচরণ চক্রবর্তী, মাতা সুশীলা দেবী। অকালমৃত্যুর ফলে প্রতিভার স্বাক্ষর সম্পূর্ণ লিপিবদ্ধ করিয়া যাইতে না পারিলেও যৌবনেই যাঁহারা বাংলা সাহিত্যক্ষেত্রে নিজ ক্ষমতার স্থায়ী চিহ্ন অঙ্কিত করিয়া গিয়াছেন অজিতকুমার তাহাদের অন্যতম। তরুণ বয়সেই তিনি রবীন্দ্র-সাহিত্য ও ব্যক্তি-রবীন্দ্রের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় আকৃষ্ট হন ; এবং বি. এ. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হইবার পর ত্যাগব্ৰত স্বীকার করিয়া শান্তিনিকেতন বিদ্যালয়ে অধ্যাপকরূপে যােগ দেন। শিক্ষাদানকর্মে সাহিত্যরসাস্বাদনে অভিনয়ে সংগীতে সকল দিক হইতে ছাত্রদের মনকে উদ্বোধিত করিয়া তুলিতে তিনি বিশেষ আগ্রহ বােধ করিতেন ; এ বিষয়ে তাহার ক্ষমতা, নিষ্ঠা, উদ্যম ও উদ্ভাবনশীলতা রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাদর্শকে রূপায়িত করিয়া তুলিতে এককালে বিশেষ সহায় হইয়াছিল। ব্রহ্মবিদ্যালয় নামে একখানি গ্রন্থে (১৩১৮) এই বিদ্যালয়ের প্রথম দশকের ইতিহাস ও আদর্শ তিনি বিশ্লেষণ করিয়া গিয়াছেন। অজিতকুমার রবীন্দ্র-সাহিত্যের একজন প্রধান ব্যাখ্যা বলিয়া পরিগণিত। তাহার ‘রবীন্দ্রনাথ (১৩১৯) ও ‘কাব্যপরিক্রমা (১৩২২) দীর্ঘকাল রবীন্দ্র-সাহিত্যপাঠকের প্রধান সহায় ছিল ; প্রকাশের প্রায় পঞ্চাশ বৎসর পরে, ইতিমধ্যে রবীন্দ্রসাহিত্য সম্বন্ধে বহু প্রামাণিক পুস্তক প্রকাশিত হইয়া থাকিলেও, এই দুইখানি গ্রন্থ এখনও অভিনিবিষ্ট রবীন্দ্রচর্চাকারীর পক্ষে অবশ্যপাঠ্য হইয়া আছে। রবীন্দ্রনাথের নিয়তসঙ্গলাভ ও তাহার সহিত রবীন্দ্র-সাহিত্যধারার বিকাশ সম্বন্ধে আলােচনার শুভযােগ তাহার লিখিত কবি-পরিচিতিকে বিশেষ একটি মূল্য দিয়াছে। ১৯১০ খ্রষ্টাব্দে তিনি ধর্মতত্ত্ব অধ্যয়নের জন্য একটি বৃত্তিলাভ করিয়া বিলাতে গিয়াছিলেন। রবীন্দ্রনাথের স্বকৃত অনুবাদ ইওরােপে প্রকাশিত হইবার পূর্বেও রবীন্দ্ররচনার অজিতকুমার-কৃত কিছু কিছু অনুবাদ বিলাতে সুধীসমাজের কোনও কোনও মহলে প্রচারিত ও সমাদৃত হইয়াছিল। ক্ষিতিমােহন সেন সংকলিত কবীর-দোহার অনেকগুলি তিনি ইংরেজীতে অনুবাদ করেন ; তাহারই ভিত্তিতে রবীন্দ্রনাথ One Hundred Poems of Kabir গ্রন্থ সম্পাদন করেন। ________________

অজিত কেশকম্বলী পরবর্তীকালে বাঙালী সাহিত্যিক ও পাঠকের মনে আধুনিক পাশ্চাত্ত্য সাহিত্য সম্বন্ধে যে আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় মেটারলিঙ্ক, এ, ই, ফ্রান্সিস টমসন, হুইটম্যান প্রভৃতি কবি ও নাট্যকারের বিষয় প্রভূত আলােচনা করিয়া অজিতকুমার তাহার অনুকুল পরিমণ্ডল রচনা করিয়া গিয়াছেন। তাহার এই সকল রচনার কোনও কোনওটি তাঁহার ‘বাতায়ন’ (১৩২২) গ্রন্থে সন্নিবিষ্ট আছে। অজিতকুমার রচিত ‘মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৯১৬) | বাংলা জীবনীসাহিত্যে প্রধান গ্রন্থ গুলির অন্যতম। | কিশােরবয়স্কদের জন্য রচিত তাহার ‘খ্রীষ্ট’ (১৩১৮) গ্রন্থও উল্লেখযােগ্য। অভিন্নহৃদয় সতীর্থ অকালপরলােকগত কবি সতীশচন্দ্র রায়ের রচনাবলী’ও (১৩১৯ ) তিনি সংকলনপূর্বক গ্রন্থাকারে প্রকাশ করেন। অজিতকুমার অভিনয়পটু ছিলেন, রবীন্দ্রনাথ কর্তৃক | প্রযােজিত কোনও কোনও নাট্যাভিনয়ে তাহার নৈপুণ্য পরিলক্ষিত হইয়াছিল ; তিনি সুকণ্ঠ গায়ক ছিলেন, সেকালে রবীন্দ্রসংগীতচর্চার তিনি অন্যতম বাহক ছিলেন। | মৃত্যুর পূর্বে তিনি ব্রজেন্দ্রনাথ শীলের উপদেশ-নির্দেশ | লইয়া রামমােহন-চরিত লিখিতে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন। রামমােহন রায় সম্বন্ধে অজিতকুমারের কয়েকটি রচনা | ‘রাজা রামমােহন (১৯৩৪ ) গ্রন্থে সংকলিত হইয়াছে। | তাহার বহু মূল্যবান রচনা এখনও সাময়িক পত্রে বিক্ষিপ্ত হইয়া আছে। পুলিনবিহারী সেন

অজিত কেশকলী গৌতম বুদ্ধের সমসাময়িক যে ছয়জন প্রচারক অপধর্মীয় (heretic ) বলিয়া বৌদ্ধ গ্রন্থসমূহে অপখ্যাত, অজিত কেশকম্বলী বা কেশকম্বল তাহাদের অন্যতম। কেশকম্বলী শব্দটিকে আক্ষরিক অর্থে গ্রহণ করিয়া বলা হয় যে অজিত ও তঁাহার | সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিগণ চুলের তৈয়ারি কম্বল পরিধান করিতেন ( দীঘনিকায়ের কপ-সীহনাদ সুত্তের অঠকথা দ্র)। বৌদ্ধ ও জৈন গ্রন্থাবলীতে বণিত অজিতের মতবাদ সর্বত্র এক নহে, কিন্তু সর্বত্রই তাহা বিরুদ্ধ ও হেয় | মতবাদ এবং প্রধানতঃ তাহা উচ্ছেদবাদ (nihilism ) (দীঘ-নিকায়ের সামঞঞফল ও ব্রহ্মজাল সুত্ত এবং মজুঝিমনিকায়, ১, ও সঞ ঞ ওনিকায়, ৩, হিসাবেই বর্ণিত হইয়াছে- অর্থাৎ অজিত যাহা অস্বীকার করিতেন মূলতঃ | তাহারই বর্ণনা এই সকল গ্রন্থে আছে। দীঘনিকায়এর সামঞঞফল সুত্তে বর্ণিত অজাতশত্রুর প্রশ্নের উত্তরে

৩১